বিষয়বস্তুতে চলুন

হরিহর (দেবতা)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষ্ণু (বাম অর্ধ—নীল) ও শিব (ডান অর্ধ—সাদা)

হরিহর হল হিন্দু দেবতা বিষ্ণু (হরি) ও শিবের (হর) একটি মিশ্র রূপ। এই রূপটি শঙ্করনারায়ণ ("শঙ্কর" মানে শিব, এবং "নারায়ণ" নামে বিষ্ণু) নামেও পরিচিত। বৈষ্ণবশৈব ধর্মাবলম্বীরা এই রূপটিকে সর্বোচ্চ ঈশ্বরের একটি রূপ হিসেবে পূজা করেন। একই পরমেশ্বরের দুটি ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সহাবস্থান বোঝাতেও হিন্দু দর্শনে "হরিহর" কথাটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, বিষ্ণু ও শিবের স্বরূপ (বৈদিকপৌরাণিক ধর্মশাস্ত্রের বর্ণনা অনুসারে) এবং তাদের ভিন্ন বা অভিন্ন অবস্থা হিন্দু দর্শনের বিভিন্ন শাখায় একটি বিতর্কের বিষয়।

বৈশিষ্ট্য

[সম্পাদনা]
বিষ্ণু (বাম অর্ধ, হাতে সুদর্শন চক্র) ও শিব (হালকা গায়ের রং, হাতে ত্রিশূল) একই মূর্তিতে সন্নিবেশিত। সঙ্গে লক্ষ্মীপার্বতী

হিন্দুধর্মের বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি বিষ্ণু ও শিবকে ঘিরে একাধিক কিংবদন্তি ও প্রথার জন্ম দিয়েছে। কোনো কোনো সম্প্রদায়ের মতে শুধু বিষ্ণুই (ও তার অবতারসমূহ) সর্বোচ্চ ঈশ্বর। আবার কোনো কোনো সম্প্রদায় শিবকে (তার বিভিন্ন রূপভেদ সহ) সর্বোচ্চ ঈশ্বর মনে করে। কোনো কোনো সম্প্রদায়ের মতে শিব ও বিষ্ণু একই ঈশ্বরের দুটি ভিন্ন রূপ এবং উভয়েই পরমেশ্বর। আবার কোনো কোনো সম্প্রদায় পরমেশ্বরকে নিরাকার (অদ্বৈত) মনে করে। তারা বিষ্ণু ও শিবকে নিরাকার ব্রহ্মের দুটি ভিন্ন রূপ মনে করেন।

বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ ও সেগুলির অনুবাদ উদ্ধৃত করে প্রত্যেক মতের স্বপক্ষেই প্রমাণ দেওয়া যায়। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই একটি রূপকে অপর রূপের ঊর্ধ্বে রাখা হয়। তবে আজও শৈবরা শিবকে এবং বৈষ্ণবরা বিষ্ণুকে অন্যান্য দেবতাদের উপরে স্থান দেন।[]

অভিন্নতা

[সম্পাদনা]

শিবানন্দের মতে: "শিব ও বিষ্ণু এক ও অভিন্ন। তাঁরা স্বরূপত এক ও অভিন্ন। সর্বব্যাপী পরমাত্মা বা পরম সত্যের বিভিন্ন রূপের এই দুটি ভিন্ন নাম। ‘শিবস্য হৃদয়ং বিষ্ণুর্বিষ্ণোশ্চ হৃদয়ং শিবঃ’—শিব বিষ্ণুর হৃদয় ও একই ভাবে বিষ্ণু শিবের হৃদয়।"

স্বামীনারায়ণ মতেও বিষ্ণু ও শিব একই ঈশ্বরের দুটি ভিন্ন রূপ মাত্র।[][][] উল্লেখ্য, স্বামীনারায়ণ মতবাদ বৈষ্ণবদের মধ্যে সংখ্যালঘু হলেও সমসাময়িক স্মার্ত মতানুসারী হিন্দুধর্মে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি মত।[]

অবতার

[সম্পাদনা]

ভক্তদের অনুভবে সিদ্ধযোগী ভাদুড়ি মহাশয় - মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ হলেন হরিহরের অবতার। তাঁদের চোখে নগেন্দ্রনাথ ছিলেন - বহিরঙ্গে শিব, অন্তরঙ্গে বিষ্ণু। মহর্ষি নগেন্দ্রনাথকে যোগশিক্ষা প্রদান করেছিলেন স্বয়ং নারায়ণ :

" লঘিমা সিদ্ধ যোগী মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ বলছেন নারায়ণ তাঁকে যোগের গুরু হিসেবে দর্শন দেন। তিনি নিয়ত শঙ্খ, চক্র, গদাপদ্মাধারী শ্রীহরির দর্শন পেতেন, কথোপকথনও হতো।"[]

কিন্তু নিজে সিদ্ধ যোগী হলেও মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ নির্দেশ করে গিয়েছেন ভক্তি মার্গ :

"In Maharshi Nagendranath's life and teachings we find a synthesis of Karma-yoga, Jnana-Yoga, Dhyana-yoga and Bhakti-yoga. But, as we have said, he always affirmed that Bhakti-yoga or the path of devotion is the easiest and safest way to attain God. In his later years he used to say that nothing can be achieved without the Grace of God."[]

পশ্চিমে যাত্রার আগে পরমহংস যোগানন্দ মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের কাছ বিদায় আশীর্বাদ গ্রহণ করেন। নগেন্দ্রনাথ তাঁকে আশীর্বাদ করে বলেন :

“Son, go to America. Take the dignity of hoary India for your shield. Victory is written on your brow; the noble distant people will well receive you.”

[]

শিল্পকলা

[সম্পাদনা]
হরিহরের মূর্তি। পূর্ব জাভার চণ্ডী সিম্পিং মন্দিরে মাজাপাহিতের প্রথম রাজা কের্তারাজাসারের (১২৯৩-১৩০৯) দেবত্বীকৃত মূর্তি।
ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রক্ষিত হরিহর ভাস্কর্য। বাম অর্ধটি শিবের (হাতে ত্রিশূল) ও ডান অর্ধটি বিষ্ণু (হাতে সুদর্শন চক্র ও শঙ্খ)

হরিহ, অর্ধেক অংশ বিষ্ণুর মতো। শিব অর্ধের মাথায় জটা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাঘছাল পরা। এই অর্ধের গায়ের রং সাদাটে, কোথাও কোথাও ছাইমাখা। বিষ্ণু অর্ধটি মুকুট ও অন্যান্য অলংকার পরিহিত। এটির গায়ের রং কালো। শিব অংশটি যোগীদের মতো। বিষ্ণু অংশটি রাজসিক। তাই এই মূর্তিটিকে যোগী ও গৃহস্থের উভয়ের পূজার উপযোগী মনে করা হয়।[] যদিও অন্যমতে শিবকে গৃহস্থেরও আদর্শ মনে করা হয়। এবং সেই কারণেই তাকে বিষ্ণুর সঙ্গে একীকৃত করা হয়েছে বলে মনে করা হয়।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

পাদটীকা

[সম্পাদনা]
  1. "Lord Sambhu [Siva] the greatest of Vaishnavas and vice versa" from Bhag-Purana 12.13.16 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে
  2. [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে, verses 47, 84, of their scripture, Shikshapatri, [২] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে states, "And the oneness of Narayana and Shiva should be understood, as the Vedas have described both to be brahmaroopa, or form of Brahman, i.e., Saguna Brahman, indicating that Vishnu and Shiva are different forms of the one and same God.
  3. "Swaminarayan Satsang - Scriptures"। ১৬ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০১৩ 
  4. http://www.swaminarayansatsang.com/library/scriptures/scriptureexplanation.asp?IDProduct=762&idcategory=2=[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. "Heart of Hinduism: The Smarta Tradition"। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০১৩ 
  6. মুখোপাধ্যায়, ডঃ রঘুপতি (ডিসেম্বর ২০১৬)। শ্রীশ্রী নগেন্দ্র গীতা। সনাতন ধর্ম প্রচারিণী সভা (১৮৯১) ও শ্রীশ্রীনগেন্দ্র মঠ (১৯১৬), ২বি রামমোহন রায় রোড, কলকাতা- ৯। 
  7. Sen Shastri, Prof. Tripurasankar (ডিসেম্বর ২০২০)। The Levitating Saint। Nagendra Mission, 2B Rammohan Roy Road, Kolkata-7000009। পৃষ্ঠা 28। 
  8. Paramhansa, Yogananda (২০১৮)। AUTOBIOGRAPHY OF A YOGI। THE PHILOSOPHICAL LIBRARY, NEW YORK। পৃষ্ঠা 64। 
  9. Thirty Thousand Years of Art. Phaidon Press Limited. p. 484

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]

শিব ও বিষ্ণুর স্বরূপ

[সম্পাদনা]

হরিহরের ছবি

[সম্পাদনা]