সোহেল রানা (অভিনেতা)
সোহেল রানা | |
---|---|
জন্ম | মাসুদ পারভেজ ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশী |
পেশা | অভিনেতা চলচ্চিত্র পরিচালক চলচ্চিত্র প্রযোজক |
কর্মজীবন | ১৯৭২ – বর্তমান |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | দোস্ত দুশমন জিঞ্জির বারুদ ওস্তাদ সাগরেদ জনি অস্বীকার আসামি হাজির আখেরি নিশান জারকা প্রতিহিংসা প্রেমনগর চ্যালেঞ্জ বড় মা নাম বদনাম প্রেম বন্ধন গাদ্দার মহারাজা সেলিম জাভেদ স্ত্রী প্রহরী প্রেমের দাবি অজান্তে হাঙর নদী গ্রেনেড সাহসী মানুষ চাই মায়ের মর্যাদা |
দাম্পত্য সঙ্গী | ডা. জিনাত পারভেজ (১৯৯০-বর্তমান) |
সন্তান | মাশরুর পারভেজ জীবরান (পুত্র) |
আত্মীয় | মাসুম পারভেজ রুবেল (ভাই) কামাল পারভেজ (ভাই) তানিয়া আহমেদ (ভাগ্নী) |
পুরস্কার | জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার |
মাসুদ পারভেজ (জন্ম ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭)[১] একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক ও রাজনীতিবিদ। তিনি চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন সোহেল রানা নাম ধারণ করে।[২] কিন্তু ১৯৭২ সালে মাসুদ পারভেজ নামে চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন।[৩] বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র ওরা ১১ জন ছবির প্রযোজক হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। এটি পরিচালনা করেন চাষী নজরুল ইসলাম। ১৯৭৩ সালে সোহেল রানা নাম ধারণ করে কাজী আনোয়ার হোসেনের বিখ্যাত কাল্পনিক চরিত্র মাসুদ রানার একটি গল্প অবলম্বনে মাসুদ রানা ছবির নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং একই ছবির মাধ্যমে তিনি মাসুদ পারভেজ নামে পরিচালক হিসেবেও যাত্রা শুরু করেন।[৩]এছাড়াও তিনি "বাংলাদেশ ইনসাফ পার্টি" নামক রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা।[৪][৫]
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে তার অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের নিকট থেকে তিনি তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।[৩] এছাড়া ২০১৯ সালে তাঁকে আজীবন সম্মাননা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করা হয়।[৬]
প্রাথমিক জীবন
[উৎস সম্পাদনা]মাসুদ পারভেজের জন্ম ১৯৪৭ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকাতে। তিনি শিক্ষা জীবনে একজন ছাত্রনেতা ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঝাপিয়ে পড়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। তার জন্ম ঢাকাতে হলেও পৈতৃক বাসস্থান বরিশাল জেলায়। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের সাথে যুক্ত হন, প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে মাসুদ পারভেজ এবং অভিনেতা হিসেবে সোহেল রানা নাম ধারণ করে।
শিক্ষা
[উৎস সম্পাদনা]১৯৬১ সালে ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। ওই কলেজে পড়ার সময় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৬৫ সালে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের এজিএস, ১৯৬৮ সালে পুরো পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন ইকবাল হলের ভিপি নির্বাচিত হন।[৭]
চলচ্চিত্র জীবন
[উৎস সম্পাদনা]মাসুদ পারভেজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরপরই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। প্রযোজক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন পারভেজ ফিল্মস এবং এই প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে চাষী নজরুল ইসলাম এর পরিচালনায় নির্মাণ করেন বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ওরা ১১ জন। এটি মুক্তি পায় ১৯৭২-এ।[৩] অভিনেতা ও পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু ১৯৭৩ সালে। কাজী আনোয়ার হোসেন এর বিখ্যাত কাল্পনিক চরিত্র মাসুদ রানা সিরিজের একটি গল্প অবলম্বনে মাসুদ রানা চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন সোহেল রানা নাম ধারণ করে এবং একই ছবির মাধ্যমে তিনি পরিচালক হিসেবে মাসুদ পারভেজ নামে। এই ছবিটি মুক্তির মাধ্যমে দর্শকরা তাকে পর্দায় দেখতে পান ১৯৭৪ সালে।
- সভাপতি
২০১১ সালে ঢাকার বিজয়নগরে প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির কার্যালয়ে প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির নির্বাচনে মাসুদ পারভেজ সভাপতি নির্বাচিত হন।[৮]
রাজনৈতিক জীবন
[উৎস সম্পাদনা]মাসুদ পারভেজ ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের তুখোড় নেতা ছিলেন। তিনি ২০০৯ সালে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যপদ গ্রহণ করে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।[৯] তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের নির্বাচন বিষয়ক উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ পান।[১০] ২০২৪ সালের ৪ অক্টোবর, তিনি বাংলাদেশ ইনসাফ পার্টি নামক নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন।[৫]
পারিবারিক জীবন
[উৎস সম্পাদনা]১৯৯০ সালে তিনি ডা. জিনাত পারভেজকে বিয়ে করেন।[১১] তাদের একমাত্র সন্তান পুত্র মাশরুর পারভেজ জীবরান। অভিনেতা মাসুম পারভেজ রুবেল তার ভাই।
প্রযোজক ও পরিচালক
[উৎস সম্পাদনা]চলচ্চিত্রের তালিকা
[উৎস সম্পাদনা]
প্রযোজনা
[উৎস সম্পাদনা]- ওরা ১১ জন (১৯৭২)
- মাসুদ রানা (১৯৭৪)
- এপার ওপার (১৯৭৫)
- দস্যু বনহুর (১৯৭৬)
- গুনাহগার
- জবাব (১৯৭৭)
- যাদুনগর (১৯৮০)
- জীবন নৌকা (১৯৮১)
- যুবরাজ
- নাগ পূর্ণিমা (১৯৮৩)
- বিদ্রোহী
- শরীফ বদমাশ (১৯৮৪)
- রক্তের বন্দী (১৯৮৫)
- লড়াকু (১৯৮৬)
- বীরপুরুষ (১৯৮৮)
- মারকশা (১৯৮৯)
- বজ্রমুষ্ঠি (১৯৮৯)
- ঘেরাও (১৯৯১)
- চোখের পানি (১৯৯২)
- শত্রু ভয়ংকর (১৯৯২)
- মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা (১৯৯২)
- ঘরের শত্রু (১৯৯৪)
- বিশ্বপ্রেমিক (১৯৯৫)
- গৃহযুদ্ধ (১৯৯৫)
- আন
- বাঘের থাবা
- শত্রু সাবধান (১৯৯৮)
- খাইছি তোরে (২০০০)
- ভালবাসার মূল্য কত (২০০২)
- অন্ধকার চিতা (২০০৩)
- ভয়ংকর রাজা (২০০৫)
- ডাল ভাত (২০০৬)
- চারিদিকে অন্ধকার (২০০৭)
- রিটার্ন টিকেট (২০০৯)
- মায়ের জন্য পাগল (২০১১)
- অদৃশ্য শত্রু (২০১৪)
পরিচালনা
[উৎস সম্পাদনা]- মাসুদ রানা (১৯৭৪)
- এপার ওপার (১৯৭৫)
- দস্যু বনহুর (১৯৭৬)
- জীবন নৌকা (১৯৮১)
- মারকশা (১৯৮৯)
- ঘেরাও (১৯৯১)
- চোখের পানি (১৯৯২)
- শত্রু সাবধান (১৯৯৮)
- খাইছি তোরে (২০০০)
- ভালবাসার মূল্য কত (২০০২)
- রিটার্ন টিকেট (২০০৯)
লেখক
[উৎস সম্পাদনা]- ভালবাসার মূল্য কত (২০০২) - কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ
- চারিদিকে অন্ধকার (২০০৭) - কাহিনী
টেলিভিশন
[উৎস সম্পাদনা]নাটক
[উৎস সম্পাদনা]- নায়ক (২০১৬), পরিচালক -আদিবাসী মিজান[১২]
পুরস্কার ও সম্মাননা
[উৎস সম্পাদনা]তিনি তার দীর্ঘ অভিনয় জীবনে অভিনেতা হিসেবে তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন। এছাড়াও পেয়েছেন বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রদানকৃত পুরস্কার।
বছর | পুরস্কার | বিভাগ | চলচ্চিত্র | ফলাফল |
---|---|---|---|---|
১৯৮৩ | জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার | শ্রেষ্ঠ অভিনেতা | লালু ভুলু | বিজয়ী |
১৯৯৬ | শ্রেষ্ঠ অভিনেতা | অজান্তে | বিজয়ী | |
২০০৩ | শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা | সাহসী মানুষ চাই | বিজয়ী | |
২০১৫ | ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার | আজীবন সম্মাননা | বিজয়ী | |
২০১৮ | টেলিভিশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ট্রাব) পুরস্কার | আজীবন সম্মাননা[১৩] | বিজয়ী | |
২০১৯ | জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আজীবন সম্মাননা | আজীবন সম্মাননা | বিজয়ী |
আরও দেখুন
[উৎস সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[উৎস সম্পাদনা]- ↑ "জন্মদিনের উৎসবে সোহেল রানা"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। ঢাকা, বাংলাদেশ। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১৬।
- ↑ "৭০ এ পা সোহেল রানার"। দৈনিক ভোরের কাগজ। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। ৩ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১৬।
- ↑ ক খ গ ঘ স্টাফ রিপোর্টার: (১০ অক্টোবর ২০১১)। "তারকার ডায়েরি"। দৈনিক মানবজমিন। ঢাকা, বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১২।
- ↑ নিউজ, সময়। "নায়ক সোহেল রানার নতুন রাজনৈতিক দল 'বাংলাদেশ ইনসাফ পার্টি' | বিনোদন"। Somoy News। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-০৯।
- ↑ ক খ "নায়ক সোহেল রানার নতুন দলের নাম বাংলাদেশ ইনসাফ পার্টি"। দৈনিক ইনকিলাব। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-০৯।
- ↑ "সেরা অভিনেতা তারিক আনাম, সেরা অভিনেত্রী সুনেরা; ন ডড়াই সেরা চলচ্চিত্র"। দৈনিক কালের কণ্ঠ। ৩ ডিসেম্বর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০২০।
- ↑ সাজু, শাহ আলম (২০২১-০২-২১)। "নায়ক পরিচয়ের আড়ালের সোহেল রানা মহানায়ক"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-৩১।
- ↑ "সোহেল রানা"। দৈনিক সমকাল। ঢাকা, বাংলাদেশ। ১৩ আগস্ট ২০১১। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১৬।
- ↑ "জাপার প্রেসিডিয়াম পদ নিয়ে বিতর্কিত সোহেল রানা"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২৫ মার্চ ২০১৫। ২৮ জুন ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১৬।
- ↑ "এরশাদের নির্বাচন বিষয়ক উপদেষ্টা হলেন অভিনেতা সোহেল রানা"। দৈনিক ইত্তেফাক। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১৬।
- ↑ "সোহেল রানার বিবাহবার্ষিকীতে তারকারা"। দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা, বাংলাদেশ। ১৭ আগস্ট ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১৬।
- ↑ আমিনুল ই শান্ত (১৪ ডিসেম্বর ২০১৫)। "এক ফ্রেমে সোহেল রানা-বাঁধন"। রাইজিংবিডি। ঢাকা, বাংলাদেশ। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১৬।
- ↑ "প্রদান করা হলো ট্রাব অ্যাওয়ার্ড- ২০১৭"। দৈনিক ইত্তেফাক। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। ১৫ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০২০।
বহিঃসংযোগ
[উৎস সম্পাদনা]- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে সোহেল রানা (ইংরেজি)
- বাংলা মুভি ডেটাবেজে সোহেল রানা
- ১৯৪৭-এ জন্ম
- জীবিত ব্যক্তি
- ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী অভিনেতা
- ২১শ শতাব্দীর বাংলাদেশী অভিনেতা
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- ঢাকার অভিনেতা
- বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা
- বাংলাদেশী চলচ্চিত্র প্রযোজক
- বাংলাদেশী চলচ্চিত্র পরিচালক
- বাংলাদেশী টেলিভিশন অভিনেতা
- শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (বাংলাদেশ) বিজয়ী
- শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (বাংলাদেশ) বিজয়ী
- জাতীয় পার্টির রাজনীতিবিদ
- আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আজীবন সম্মাননা বিজয়ী
- ঢাকার ব্যক্তি