ষাট গম্বুজ মসজিদ
ষাট গম্বুজ মসজিদ | |
---|---|
![]() | |
অবস্থান | বাগেরহাট, বাংলাদেশ |
স্থানাঙ্ক | ২২°৪০′২৮″ উত্তর ৮৯°৪৪′৩১″ পূর্ব / ২২.৬৭৪৪৪° উত্তর ৮৯.৭৪১৯৪° পূর্ব |
অঞ্চল | ১,৬০৫ মি২ (১৭,২৮০ ফু২) |
নির্মিত | ১৫শ শতক |
স্থপতি | খান জাহান আলী |
স্থাপত্যশৈলী | তুগলক |
ধরন | সাংস্কৃতিক |
মানদণ্ড | iv |
মনোনীত | 1985 (9th session) |
সূত্র নং | ৩২১ |
বাংলাদেশে ইসলাম |
---|
![]() |
ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ।মসজিদটির গায়ে কোনো শিলালিপি নেই। তাই এটি কে নির্মাণ করেছিলেন বা কোন সময়ে নির্মাণ করা হয়েছিল সে সম্বন্ধে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।ধারণা করা হয় এটি ১৫শ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করেন।[১] এ মসজিদটি বহু বছর ধরে ও বহু অর্থ খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছিল। পাথরগুলো আনা হয়েছিল রাজমহল থেকে। এটি বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের একটির মধ্যে অবস্থিত; বাগেরহাট শহরটিকেই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কো এই সম্মান প্রদান করে।[২]
মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। দেয়ালগুলো প্রায় ৮·৫ ফুট পুরু। ষাট গম্বুজ মসজিদে গম্বুজের সংখ্যা মোট ৮১ টি, সাত লাইনে ১১ টি করে ৭৭ টি এবং চার কোনায় ৪ টি মোট ৮১ টি। কালের বিবর্তনে লোকমুখে ৬০ গম্বুজ বলতে বলতে ষাট গম্বুজ নামকরণ হয়ে যায়, সেই থেকে ষাট গম্বুজ নামে পরিচিত।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]সুলতান নসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের (১৪৩৫-৫৯) আমলে খান আল-আজম উলুগ খানজাহান সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে খলিফাবাদ রাজ্য গড়ে তোলেন। খানজাহান বৈঠক করার জন্য একটি দরবার হল গড়ে তোলেন, যা পরে ষাট গম্বুজ মসজিদ হয়।[৩] এ মসজিদটি বহু বছর ধরে ও বহু অর্থ খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছিল। পাথরগুলো আনা হয়েছিল রাজমহল থেকে। তুঘলকি ও জৌনপুরী নির্মাণশৈলী এতে সুস্পষ্ট।[৪]
বহির্ভাগ
[সম্পাদনা]মসজিদটির পূর্ব দেয়ালে ১১টি বিরাট আকারের খিলানযুক্ত দরজা আছে। মাঝের দরজাটি অন্যগুলোর চেয়ে বড়। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে আছে ৭টি করে দরজা। মসজিদের ৪ কোণে ৪টি মিনার আছে। এগুলোর নকশা গোলাকার এবং এরা উপরের দিকে সরু হয়ে গেছে। এদের কার্ণিশের কাছে বলয়াকার ব্যান্ড ও চূঁড়ায় গোলাকার গম্বুজ আছে। মিনারগুলোর উচ্চতা, ছাদের কার্নিশের চেয়ে বেশি। সামনের দুটি মিনারে প্যাঁচানো সিঁড়ি আছে এবং এখান থেকে আজান দেবার ব্যবস্থা ছিল। এদের একটির নাম রওশন কোঠা, অপরটির নাম আন্ধার কোঠা। মসজিদের ভেতরে ৬০টি স্তম্ভ বা পিলার আছে। এগুলো উত্তর থেকে দক্ষিণে ৬ সারিতে অবস্থিত এবং প্রত্যেক সারিতে ১০টি করে স্তম্ভ আছে। প্রতিটি স্তম্ভই পাথর কেটে বানানো, শুধু ৫টি স্তম্ভ বাইরে থেকে ইট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এই ৬০টি স্তম্ভ ও চারপাশের দেয়ালের ওপর তৈরি করা হয়েছে গম্বুজ। মসজিদটির নাম ষাট গম্বুজ (৬০ গম্বুজ) মসজিদ হলেও এখানে গম্বুজ মোটেও ৬০টি নয়,বরং গম্বুজ সংখ্যা ৮১টি। ৭৭টি গম্বুজের মধ্যে ৭০ টির উপরিভাগ গোলাকার (৬০টি ৩ মিটার, ১০টি ২.৮ মিটার) এবং পূর্ব দেয়ালের মাঝের দরজা ও পশ্চিম দেয়ালের মাঝের মিহরাবের মধ্যবর্তী সারিতে যে সাতটি গম্বুজ সেগুলো দেখতে অনেকটা বাংলাদেশের চৌচালা ঘরের চালের মতো। মিনারে গম্বুজের সংখ্যা ৪ টি-এ হিসেবে গম্বুজের সংখ্যা দাঁড়ায় মোট ৮১ তে।[৫] তবুও এর নাম হয়েছে ষাটগম্বুজ। ঐতিহাসিকরা মনে করেন, সাতটি সারিবদ্ধ গম্বুজ সারি আছে বলে এ মসজিদের সাত গম্বুজ এবং তা থেকে ষাটগম্বুজ নাম হয়েছে। আবার অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, গম্বুজগুলো ৬০ টি প্রস্তরনির্মিত স্তম্ভের ওপর অবস্থিত বলেই নাম ষাটগম্বুজ হয়েছে। [৪]।[৬]আবার কেউ বলেন ওই ৩ মিটার লম্বা ৬০টি গম্বুজের নামকরণে এর নাম হয় ষাটগম্বুজ মসজিদ।
অভ্যন্তরভাগ
[সম্পাদনা]মসজিদের ভেতরে পশ্চিম দেয়ালে ১০টি মিহরাব আছে। মাঝের মিহরাবটি আকারে বড় এবং কারুকার্যমন্ডিত। এ মিহরাবের দক্ষিণে ৫টি ও উত্তরে ৪টি মিহরাব আছে। শুধু মাঝের মিহরাবের ঠিক পরের জায়গাটিতে উত্তর পাশে যেখানে ১টি মিহরাব থাকার কথা সেখানে আছে ১টি ছোট দরজা। কারো কারো মতে, খান-ই-জাহান এই মসজিদটিকে নামাজের কাজ ছাড়াও দরবার ঘর হিসেবে ব্যবহার করতেন, আর এই দরজাটি ছিল দরবার ঘরের প্রবেশ পথ। আবার কেউ কেউ বলেন, মসজিদটি মাদরাসা হিসেবেও ব্যবহৃত হত।ইমাম সাহেবের বসার জায়গা হিসেবে রয়েছে মিম্বার।
চিত্রশালা
[সম্পাদনা]-
বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ
-
ষাট গম্বুজ মসজিদ
-
মসজিদের অভ্যন্তরভাগ
-
মসজিদের বাইরের অংশ
-
ষাট গম্বুজ মসজিদ প্রাঙ্গণের মূল ফটক
-
মসজিদের মিম্বার
-
মসজিদের অভ্যন্তর
-
ভেতরের দৃশ্য, পিলার সমূহ ।
-
বাগেরহাট জাদুঘর
-
বাইরের দৃশ্যসহ
-
ষাট গম্বুজ মসজিদ ২০২৫ সালের স্থিরচিত্র ।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ বাগেরহাট, শেখ আবু তালেব (২০২৪-০৩-৩০)। "ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী ষাট গম্বুজ মসজিদ"। dhakapost.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-২৩।
- ↑ "ষাট গম্বুজ মসজিদ"। www.archaeology.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০২০।
- ↑ "Shat Gombuj Mosque – Bangladesh" (ইংরেজি ভাষায়)। Banglaview24.com। ২০১২-০৪-২৪। ২০১৩-০৯-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৮-২৮।
- ↑ ক খ সুনীল দাস (৬ সেপ্টেম্বর ২০১০)। "ষাট গম্বুজ মসজিদ"। দৈনিক কালের কণ্ঠ (প্রিন্ট) । ঢাকা। পৃষ্ঠা ১৪।
- ↑ ডেস্ক, ধর্ম (২০২৪-০২-২৪)। "ষাট গম্বুজ মসজিদ"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-২৩।
- ↑ বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের তালিকা
- বাংলাদেশের মসজিদের তালিকা
- খুলনা বিভাগের মসজিদের তালিকা
- বাগেরহাট শহর
- খান জাহান আলী
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
