রাঢ়ী উপভাষা
অবয়ব
রাঢ়ী বাংলা | |
---|---|
কেন্দ্রীয় বাংলা | |
![]() | |
দেশোদ্ভব | ভারত এবং বাংলাদেশ |
অঞ্চল | নদিয়া জেলা সহ প্রেসিডেন্সি বিভাগ, মুর্শিদাবাদ জেলা, পূর্ব বর্ধমান জেলা, কুষ্টিয়া জেলা, মেহেরপুর জেলা, চুয়াডাঙ্গা জেলা |
মাতৃভাষী | |
বাংলা লিপি | |
ভাষা কোডসমূহ | |
আইএসও ৬৩৯-৩ | – |
গ্লোটোলগ | cent1983 (Central Bengali)[১] |
![]() |
রাঢ়ী উপভাষা বা কেন্দ্রীয় বাংলা বাংলা ভাষার একটি উপভাষা। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পূর্ব অংশ এবং বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের বাঙালিদের কথাবলার মধ্যে এই উপভাষার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।[২] এই উপভাষার পরিমার্জিত বাংলা রূপকেই বাংলা ভাষার প্রমিত লিখন রূপ হিসেবে গণ্য করা হয়।[৩]
ভৌগোলিক সীমানা
[সম্পাদনা]এই উপভাষাটি পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া জেলার পূর্বাংশ, হুগলি, হাওড়া, কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রচলিত। তাছাড়া বাংলাদেশের বৃহত্তর যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর জেলাতেও এই উপভাষা স্থানীয়ভাবে প্রচলিত। এই উপভাষা থেকে আধুনিক প্রমিত বাংলার ভিত্তি গঠিত হয়।[৪]
বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]- রাঢ়ী উপভাষার সর্বপ্রধান বৈশিষ্ট্য অভিশ্রুতি ও স্বরসংগতি। যেমন-
- ‘বলিয়া’ > ‘বলে’, ‘করিয়া’ > ‘করে’, ‘বসিয়া’ > ‘বসে’, ‘আঁকিয়া’ > ‘এঁকে’, ইত্যাদি হল অভিশ্রুতি জনিত পরিবর্তন।
- ‘দেশি’ > ‘দিশি’, ‘ইংরেজি’ > ‘ইংরিজি’, ‘তুলা’ > ‘তুলো’, ‘ইচ্ছা’ > ‘ইচ্ছে’, ইত্যাদি স্বরসঙ্গতি জনিত পরিবর্তন।
- ই, ঈ, উ, ঊ, ক্ষ এবং য-ফলা যুক্ত ‘অ’ ব্যঞ্জনের পূর্ববর্তী ‘ও’ হয়, যেমন — অতি→ ওতি, মধু→মোধু, ইত্যাদি। অন্য ক্ষেত্রেও ‘অ’-কে ‘ও’ মতো উচ্চারণের প্রবণতা দেখা যায়, যেমন — মন→মোন, বন→বোন, ইত্যাদি; তবে ‘অ’-কে ‘ও’ উচ্চারণের প্রবণতা সর্বত্র লক্ষ্য করা যায় না।
- চন্দ্রবিন্দুর উচ্চারণ রাঢ়ী উপভাষার খুবই স্পষ্ট, যেমন — চান্দ্র→চাঁদ, বদ্ধ→বাঁধ, ক্রন্দতি→কাঁদা, পুস্তক→পুথি→পুঁথি, ইত্যাদি।
- রাঢ়ীতে উত্তর পুরুষের অতীতকালের ক্রিয়াপদে লুম এবং নু ব্যবহৃত হয়, যেমন — করলুম/করনু, গেলুম/গেনু, ইত্যাদি।
- কিছু ক্ষেত্রে শব্দে ব্যবহৃত ‘ন’ ‘ল’ রূপে এবং ‘ল’ ‘ন’ রূপে উচ্চারণ লক্ষ করা যায়।
- যেমন — নৌকা→লৌকো, না→লাই, নয়→লয়; লুচি→নুচি, লেবু→নেবু, এগুলো→এগুনো, ইত্যাদি।
- কর্তৃকারকের বহুবচনে ‘গুলি’, ‘গুলো’ এবং অন্য কারকের বহুবচনে ‘দের’ বিভক্তির প্রয়োগ।
- যেমন — মেয়েগুলো, পাখিগুলি, লোকেদের।
- কোনো শব্দের আদিতে শ্বাসাঘাত হলে সেই শব্দের অন্তে অবস্থিত মহাপ্রাণ ধ্বনি স্বল্পপ্রাণ ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়, যেমন —দুদ (দুধ), মাচ (মাছ), বাগ (বাঘ), দেকচে (দেখছে), ইত্যাদি।
- কিছু শব্দের শেষে অঘোষধ্বনি ঘোষধ্বনি ও ঘোষধ্বনি অঘোষধ্বনিতে পরিবর্তিত হয়, যেমন — কাগ (কাক), আজগে (আজকে), ছাত (ছাদ), ইত্যাদি।
- কিছু শব্দের আদিতে অকারণে ‘র’ এর আগম ও লোপ, যেমন — আম > রাম, রোজা > ওঝা, রস > অস।
- কিছু শব্দের শেষে মহাপ্রাণ বর্ণ ‘ছ’ এর উচ্চারণ স্বল্পপ্রাণ বর্ণ ‘চ’ এর মতো হয়, যেমন — করিচি (করেছি), এঁইচি (এসেছি), ইত্যাদি।[৪][৫]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ হ্যামারস্ট্রোম, হারাল্ড; ফোরকেল, রবার্ট; হাস্পেলম্যাথ, মার্টিন, সম্পাদকগণ (২০১৭)। "Central Bengali"। গ্লোটোলগ ৩.০ (ইংরেজি ভাষায়)। জেনা, জার্মানি: মানব ইতিহাস বিজ্ঞানের জন্য ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট।
- ↑ "Indian Journal of Linguistics" (ইংরেজি ভাষায়)। 20। Bhasa Vidya Parishad.। ২০০১: 79।
- ↑ Bangladesh Quarterly (ইংরেজি ভাষায়)। Department of Films & Publications, Government of Bangladesh.। ২০০২। পৃষ্ঠা 6।
- ↑ ক খ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ভাষা-প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা, ১৯৩৯
- ↑ SK Chatterji, The Origin and Development of the Bengali Language, Calcutta University, Calcutta, 1926; CP Masica, The Indo-Aryan Languages, Cambridge University Press, Cambridge, 1991.