বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন | |
---|---|
![]() ২০২৪-এর আন্দোলনে একজন আন্দোলনকারীর শরীরে লেখা স্লোগান "এক দফা এক দাবী কোটা নট কাম ব্যাক (কোটা ফেরত আসবে না)"। | |
তারিখ | আনু. ২০১৩ – বর্তমান প্রথম: ৬ জুন–১৮ জুলাই ২০১৩ দ্বিতীয়: ১৭ ফেব্রুয়ারি–১৮ জুলাই ২০১৮ তৃতীয়: ১ জুলাই – ০৫ আগষ্ট ২০২৪ |
অবস্থান | |
কারণ | বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে কোটা ব্যবস্থা |
লক্ষ্য | কোটার পরিমাণ হ্রাস বা সংস্কার |
পদ্ধতি | বিক্ষোভ, বসে পড়া, আইন অমান্য, ইন্টারনেট আন্দোলন, অগ্নিসংযোগ, ধ্বংসযজ্ঞ |
ফলাফল | বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট সরকারি চাকরিতে ৯৩% মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের এবং ৫% বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য, ১% ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য এবং ১% তৃতীয় লিঙ্গ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন |
সরকারি চাকরিতে কোটার পরিমাণ কমিয়ে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার দাবিতে বাংলাদেশ কোটা সংস্কার আন্দোলন সংগঠিত হয়। ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট তিনবার কোটা সংস্কারের জন্য বড়ো ধরনের আন্দোলন সংগঠিত হয়। এখন অবধি এই আন্দোলনের পক্ষে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা এবং বিপক্ষে রয়েছে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সম-মতাবলম্বী সংগঠনসমূহ।[১][২] সর্বপ্রথম বড়ো ধরনের কোটা সংস্কার আন্দোলন হয় ২০১৩ সালে। এরপর ২০১৮ সালে আন্দোলনের পর আন্দোলনকারীদের পক্ষে পরিপত্র ঘোষণা করা হয়। কিন্তু হাইকোর্ট কর্তৃক এই পরিপত্রটি অবৈধ ঘোষণা করায় ২০২৪ সালে পুনরায় আন্দোলন শুরু হয়। প্রত্যেকবার আন্দোলনের সময় বাংলাদেশ পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষার্থীদের উপর প্রাণঘাতী হামলা চালানো হয়।[৩][৪][৫]
পটভূমি
[সম্পাদনা]বাংলাদেশের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা প্রথা বাতিল করে সে ব্যবস্থা পুনর্মূল্যায়ন করতে হাইকোর্টে ৩১শে জানুয়ারি ২০১৮ সালে একটি রিট দায়ের করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক মোহাম্মদ আবদুল অদুদ, সিনিয়র সাব এডিটর, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আনিছুর রহমান মীর তার পৈতৃক নিবাস কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলাধীন পরমতলা গ্রামে ও ঢাকাস্থ কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরামের সদস্য দিদারুল আলম দিদার। আবেদনে তারা উল্লেখ করেন, “সব মিলিয়ে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা বিদ্যমান রয়েছে। এই কোটা পদ্ধতি সংবিধানের ১৯, ২৮, ২৯ ও ২৯/৩ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।” ৫ই মার্চ ২০১৮ সালে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ আবেদনে ভুল রয়েছে এই মর্মে রিট আবেদনটি খারিজ করে দেন। [৬]বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সর্বপ্রথম ১৯৭২ সালে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। সে সময় মেধাতালিকা ২০ শতাংশ বরাদ্দ রেখে, ৪০ শতাংশ জেলাভিত্তিক, ৩০ শতাংশ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য এবং ১০ শতাংশ যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।[৭] পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকবার এই কোটা ব্যবস্থাটি পরিবর্তন করা হয়।[৮]
বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৫৫ শতাংশের বেশি কোটা রয়েছে যার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, জেলাভিত্তিক কোটা ১০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ।[৯][১০] তবে নিয়ম অনুসারে এসব কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে ১ শতাংশ প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। ফলস্বরূপ, মাত্র ৪৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী মেধার ভিত্তিতে অবস্থান নিশ্চিত করতে সক্ষম হতো। যার ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়, কারণ তারা যেকোন পরীক্ষায় কোটার অধীনে থাকা প্রার্থীদের চেয়ে বেশি নম্বর পেয়েও বঞ্চিত হচ্ছেন।
প্রথম আলোতে প্রকাশিত তথ্যমতে, নিবন্ধিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই-আড়াই লাখ,[১১] অর্থাৎ এক হাজার মানুষের মাঝে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১.২ জন বা ১.৫ জন। যা সমগ্র জনসংখ্যার ০.১২/০.১৫ শতাংশ। ০.১২ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার জন্য কোটার পরিমাণ ৩০ শতাংশ। যা হাজারে রূপান্তর করলে দেখা যায়, এক হাজার জনতার মাঝে ১ থেকে ১.৫ (দেড়) জন মুক্তিযোদ্ধার জন্য কোটার পরিমাণ ৩০০।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ১৯ (১), ২৯ (১) ও ২৯ (২) অনুচ্ছেদ সমূহে চাকুরির ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের সমান সুযোগের কথা বলা হয়েছে।
২০১৩ সালের আন্দোলন
[সম্পাদনা]২০১৮ সালের আন্দোলন
[সম্পাদনা]২০২৪ সালের আন্দোলন
[সম্পাদনা]এই আন্দোলনে সারা বাংলাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দ্বারা শুরু হলেও পরবর্তীতে নটরডেম কলেজ, আদমজী ক্যান্টমেন্ট কলেজ, সেন্ট যোসেফ কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, বিএএফ শাহীন কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দনিয়া কলেজ, ডাঃ মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ইব্রাহীম মেডিক্যাল কলেজ ,বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি,ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, সিভিল এভিয়েশন স্কুল এন্ড কলেজ, তেজগাঁও,মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সহ আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের সহিংসতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করা শুরু করে।[১২][১৩][১৪]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- ২০২৪-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন
- ২০১৮-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন
- ২০১৩-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "কোটা সংস্কার আন্দোলন : নতুন কর্মসূচি ঘোষণা"। দৈনিক নয়া দিগন্ত। ২০২৪-০৭-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-১৬।
- ↑ "Bangladesh students clash in job quota protests, at least 100 injured" en [কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০০ আহত]। দ্য রয়টার্স (ইংরেজি ভাষায়)। জুলাই ১৫, ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৫, ২০২৪।
- ↑ "ঢামেকের জরুরি বিভাগে ঢুকে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা"। দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০২৪।
- ↑ "কোটা আন্দোলন: ঢাকার বাইরের ক্যাম্পাসেও ছাত্রলীগের হামলা, মঙ্গলবার বিক্ষোভ ঘোষণা"। বিবিসি বাংলা। ২০২৪-০৭-১৫। ২০২৪-০৭-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-১৬।
- ↑ "কোটা আন্দোলন: জাহাঙ্গীরনগরে মধ্যরাত পর্যন্ত সংঘর্ষ ও হামলা, শিক্ষক গুলিবিদ্ধ হওয়ার অভিযোগ"। বিবিসি বাংলা। ২০২৪-০৭-১৬। ২০২৪-০৭-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-১৬।
- ↑ জামান, লায়লা (২০২০-১২-০১)। "প্রথম বাংলা আত্মজীবনী"। সাহিত্য পত্রিকা - Shahitto Potrika | University of Dhaka। 56 (1)। আইএসএসএন 3006-886X। ডিওআই:10.62328/sp.v56i1.2।
- ↑ "'আপাতত' কোটা সংস্কার নয়"। দৈনিক সমকাল।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার সময়ের দাবি"। ডয়েচে ভেলে। ১৭ জুলাই ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০২৪।
- ↑ "কোটা সংস্কার আন্দোলন ও কর্মসংস্থান"। বণিক বার্তা। ২০১৮-০৩-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১।
- ↑ "কোটা সংস্কারের দাবিতে শাহবাগ রণক্ষেত্র"। দৈনিক যুগান্তর। ১১ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ নজরুল, আসিফ (৪ মার্চ ২০১৮)। "সরকারি নিয়োগঃ চাকরিতে কোটা বিরোধিতার যুক্তি"। দৈনিক প্রথম আলো (মতামত সংবাদ)। ট্রান্সকম গ্রুপ। ৯ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০১৮।
১৯৮৬ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের তালিকা অনুসারে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৬৯ হাজার ৮৩৩। পরে বিভিন্ন সময়ে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বর্তমান সরকারের প্রথম দিকের একটি তালিকায় ২ লাখ ২ হাজার ৩০০ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম প্রকাশিত হয়। তাদের মধ্যে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে এই মর্মে আপত্তি দাখিল হয় ৬২ হাজার।
- ↑ "রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ"। Channel 24 (Bangladeshi TV channel)। ১৬ জুলাই ২০২৪।
- ↑ "Students protesting on the streets of the capital, clashes in Badda"। Independent Television (Bangladesh)। ১৬ জুলাই ২০২৪।
- ↑ "এবার রাস্তায় নামলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা"। Somoy TV। ১৬ জুলাই ২০২৪।