বিষয়বস্তুতে চলুন

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
২০১১ সালে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
জন্ম (1956-04-29) ২৯ এপ্রিল ১৯৫৬ (বয়স ৬৮)
কালিহাতী, টাঙ্গাইল, বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাংলাদেশী
শিক্ষাঅর্থনীতি (এমএসসি, পিএইচডি)
মাতৃশিক্ষায়তনঢাকা কলেজ
প্লেখানভ রাশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব ইকোনমিক্স
পেশাঅর্থনীতিবিদ
পিতা-মাতাদেবেশ ভট্টাচার্য
চিত্রা ভট্টাচার্য

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য (জন্ম: ১৯৫৬) বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ ও গণনীতি বিশ্লেষক। তিনি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির ডিস্টিংগুইস ফেলো ও প্রথম নির্বাহী পরিচালক। তিনি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এ সিনিয়র রিসার্চ ফেলো হিসাবেও কাজ করেছেন। ২০০৭ সালে তিনি জেনেভায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) এবং জাতিসংঘ কার্যালয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন।[]

জীবনের প্রথমার্ধ

[সম্পাদনা]

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ১৯৫৬ সালের ২৯ এপ্রিল টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী থানার এলেঙ্গার এক প্রাচীন জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা দেবেশ ভট্টাচার্য মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী ও প্রাক্তন বিচারপতি ছিলেন এবং তার মাতা চিত্রা ভট্টাচার্য ১৯৯৯ থেকে ২০০১ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের সংসদ সদস্য ছিলেন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ১৯৭২ সালে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন যান। সেখানে মস্কোর পেখানভ ইন্সটিটিউট অফ ন্যাশনাল ইকোনমি থেকে ১৯৮০ সালে সম্মানের সাথে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৮৪ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৯১- ৯২ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কুইন এলিজাবেথ হাউসে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা করেন।[]

কর্মজীবন

[সম্পাদনা]

বর্তমানে ড. দেবপ্রিয় বাংলাদেশের অন্যতম আর্থ-উন্নয়ন বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) একজন সম্মাননীয় ফেলো হিসেবে কর্মরত আছেন।[] ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি এ প্রতিষ্ঠানের প্রথম নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার আগে ১৪ বছর তিনি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেন। ২০০৭-২০০৯ সাল পর্যন্ত ড. দেবপ্রিয় জাতিসংঘসহ জেনেভা ও ভিয়েনাস্থিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[] তিনি জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলনের (আঙ্কটাড)-এর গভর্নিং বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। পাশাপাশি জেনেভায় জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশসমূহের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি আঙ্কটাড মহাসচিবের স্বল্পোন্নত দেশ বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশসমূহের চতুর্থ সম্মেলন প্রস্তুতিতে অবদান রাখেন।

আন্তর্জাতিক পরিধির বাইরে জাতীয় পর্যায়েও ড. দেবপ্রিয় সরকার গঠিত বিভিন্ন উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতির উপদেষ্টা কমিটি, ব্যাংকিংখাত সংস্কার কমিটি, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের উপদেষ্টা কমিটি, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার জন্য গঠিত অর্থনীতিবিদ প্যানেল, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের গ্যাস সম্পদ ব্যবহার সংক্রান্ত কমিটি। তিনি দীর্ঘ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়া তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের জন্য শিল্পনীতির (১৯৯৯) খসড়া প্রস্তুত করেন। তিনি চার বছর জনতা ব্যাংকের পরিচালক (১৯৯৬-২০০০) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ড. দেবপ্রিয় সিনিয়র ফুলব্রাইট ফেলো হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনস্থিত সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস ও জাপানের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ভিজিটিং ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন। অর্থনীতি বিষয়ক পরামর্শক হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেমন কোস্টারিকা, তানজানিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপাল এবং বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও জাতিসংঘের মতো বহুজাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহের সাথে কাজ করেছেন।[] এছাড়া তিনি দক্ষিণী ভয়েস নামক চিন্তাকেন্দ্র নেটওয়ার্কের প্রধান (চেয়ারম্যান)।[]

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

[সম্পাদনা]

২০২৪ সালে দেশের বিদ্যমান সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার চিত্র ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির আনুষ্ঠানিক নাম ‘বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি’। কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পরামর্শ করে কমিটিতে প্রয়োজনীয় সদস্যদের মনোনীত করবেন। এ কমিটি ৯০ দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন হস্তান্তর করবে। [] অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণকালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রারম্ভেই শ্বেতপত্র সরকারের হাতে থাকা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের বিবৃতিতে।[]

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে যে শ্বেতপত্র প্রকাশিত হবে, তাতে ছয়টি বিষয় থাকবে। সেগুলো হচ্ছে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা, মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা, বাহ্যিক ভারসাম্য, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, বেসরকারি বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান। শ্বেতপত্রে দেশের বিদ্যমান অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র থাকার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকারের কৌশলগত পদক্ষেপ, জাতিসংঘের টেকসই অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন এবং স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে করণীয় বিষয়ের প্রতিফলন থাকবে।[]

ব্যক্তিজীবন

[সম্পাদনা]

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের স্ত্রী ড. ইরিনা ভট্টাচার্য একজন অর্থনীতিবিদ এবং "বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য ও চিত্রা ভট্টাচার্য ট্রাস্টের" প্রধান নির্বাহী। তাদের একমাত্র সন্তান আলেকজান্দ্রা ভট্টাচার্য একজন মেধাস্বত্ত্ব আইন বিশেষজ্ঞ এবং জেনেভায় কর্মরত।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "HLPF 2015 – Short Bios" (পিডিএফ)জাতিসংঘ। জুন ২৬, ২০১৫। অক্টোবর ৫, ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৭, ২০১৫ 
  2. "Debapriya made envoy to UN Geneva office"দ্য ডেইলি স্টার। UNB। সেপ্টেম্বর ২১, ২০০৭। 
  3. "Debapriya resigns as permanent representative to UN office"দ্য ডেইলি স্টার। ডিসেম্বর ২৮, ২০০৮। ডিসেম্বর ২২, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৭, ২০১৫ 
  4. "Debapriya calls on president"দ্য ডেইলি স্টার। অক্টোবর ২৯, ২০০৭। ডিসেম্বর ২২, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৭, ২০১৫ 
  5. "Dr Debapriya Bhattacharya | CPD"Centre for Policy Dialogue (CPD) (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০৬ 
  6. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২০ আগস্ট ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০১৯ 
  7. প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০২৪-০৮-২১)। "অর্থনৈতিক অবস্থার 'শ্বেতপত্র' প্রকাশ করা হবে, কমিটির নেতৃত্বে দেবপ্রিয়"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৩ 
  8. "দেশের অর্থনীতির অবস্থা জানাতে শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে সরকার, কমিটিপ্রধান দেবপ্রিয়"The Business Standard (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৮-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৩ 
  9. প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০২৪-০৮-২৩)। "অর্থনীতির শ্বেতপত্রে ছয়টি বিষয় তুলে ধরবে কমিটি"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৩ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]