বিষয়বস্তুতে চলুন

ডিজিটাল বাংলাদেশ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ডিজিটাল বাংলাদেশ
দেশবাংলাদেশ
প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা
মন্ত্রণালয়
প্রধান ব্যক্তিত্ব
উদ্বোধন১ জুলাই ২০০৮; ১৬ বছর আগে (2008-07-01)
অবস্থাসমাপ্ত
ওয়েবসাইটdigitalbangladesh.gov.bd

ডিজিটাল বাংলাদেশ হলো একবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত একটি পরিকল্পনা, যা ছিল মূলত বাংলাদেশ সরকারের 'এটুআই' (অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন) প্রকল্পের একটি অংশ। এটি পরবর্তীতে 'স্মার্ট বাংলাদেশ' হিসেবে পরিচিত হয়।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণকে বোঝানো হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণাটির মূল বিষয় হলো সব ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার দেশের শিক্ষা স্বাস্থ্য কর্মসংস্থান এবং দারিদ্র্য মোচনের ব্যবস্থা করা। ২০০৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পাশাপাশি, ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার চারটি সুনির্দিষ্ট বিষয়কে গুরুত্ব দেয়, সেগুলো হল:

  1. মানব সম্পদ উন্নয়ন
  2. জনগণের সম্পৃক্ততা
  3. সিভিল সার্ভিস
  4. দৈনন্দিন জীবনের তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার।

ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা

[সম্পাদনা]

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কথাটি প্রথম সামনে আসে ২০০৮ সালে। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, "২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ পরিণত হবে", এই পরিকল্পনাটির মূল লক্ষ্য ছিল, একটি উন্নত দেশ, সমৃদ্ধ ডিজিটাল সমাজ, ডিজিটাল যুগের জনগোষ্ঠী, রূপান্তরিত উৎপাদনব্যবস্থা, নতুন জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি - সর্বোপরি একটি জ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক দেশ গঠন করা। ‘বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি’ ২০০৯ সালের ১২ থেকে ১৭ নভেম্বর, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ সামিট’ নামক বিষয়ে প্রথম শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে, যাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো আলোচিত হয়। আর এর পর থেকেই এ ব্যাপারে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কর্মসূচি গৃহীত হতে থাকে।

অগ্রযাত্রা ও অর্জন

[সম্পাদনা]
  • ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় জুন ২০১৯ পর্যন্ত দেশে ১৮ হাজার ৯৭৫ কি.মি. অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন, ২ হাজার ৪ টি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ওয়াইফাই রাউটার স্থাপন এবং ১ হাজার ৪৮৩ টি ইউনিয়নকে নেটওয়ার্ক মনিটরিং সিস্টেমে সংযুক্ত করা হয়েছে। []
  • বর্তমানে ওয়েবসাইট বা ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও দিকনির্দেশনা সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় ওয়েব পোর্টাল হলো www.bangladesh.gov.bd
  • সরকারি সেবা ও তথ্য বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দেশে তৈরি করা হয়েছে বেশ কয়টি সরকারি মোবাইল হেল্পডেস্ক। এই মোবাইল হেল্পডেস্কগুলোর নির্দিষ্ট নম্বরে কল করার মাধ্যমে মানুষ সহজেই সরকারি তথ্য ও সেবা পাচ্ছে। এই সবগুলো নম্বর টোল ফ্রি সেবার আওতায়। বর্তমানে বাংলাদেশে এমন বেশ কয়টি সরকারি হটলাইন নম্বর রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিষয় হটলাইন
সরকারি তথ্য ও সেবা ৩৩৩
জরুরি সেবা (পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও এ্যাম্বুলেন্স) ৯৯৯
শিশু ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ১০৯
দুদক ১০৬
দুর্যোগের আগাম বার্তা ১০৯০
ভূমি সেবা হটলাইন ১৬১২২
জাতীয় পরিচয়পত্র তথ্য ১০৫
শিশুর সহায়তা ১০৯৮
কৃষক বন্ধু ফোন সেবা ৩৩৩১
কৃষি কল সেন্টার ১৬১২৩
মহিলা সংস্থা বা তথ্য আপা ১০৯২২
  • বাংলাদেশে বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। ফলে সরকারি কোনো বিশেষ ঘোষণা মোবাইল ফোনের ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে সরাসরি ঐ সকল ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের নিকট পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
  • বর্তমানে বাংলাদেশের নাগরিকরা অনলাইনে আবেদন করে দেশের ৬৪টি জেলায় স্থাপিত ই-সেবা কেন্দ্র থেকে জমি-জমা সংক্রান্ত বিভিন্ন দলিলের সত্যায়িত অনুলিপি সংগ্রহ করতে পারে।
  • চিনিকলের ইক্ষু সরবরাহের অনুমতিপত্র বা পুর্জি স্বয়ংক্রিয় করা হয়েছে এবং কৃষকরা বর্তমানে মোবাইলে তাদের পুর্জি পাচ্ছে।
  • বাংলাদেশে অনলাইন বেচাকেনা ও ই-বাণিজ্য ধারণার ব্যাপক বিস্তৃতির কারণে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ই-কমার্স সাইট।
  • সকল শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক অনলাইনে সহজে প্রাপ্তির জন্য সরকারিভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ই-বই প্ল্যাটফরম তৈরি হয়েছে। এতে ৩০০টি পাঠ্যপুস্তক ও ১০০টি সহায়ক পুস্তক রয়েছে।
  • শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক ইন্টারনেট সংযোগের ফলে বর্তমানে দেশে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন অনলাইন শিক্ষামূলক প্ল্যাটফরম। যেমন '১০ মিনিট স্কুল'
  • নাগরিকদের নিকট স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার বিভিন্ন স্থানে ‘টেলিমেডিসিন সেবাকেন্দ্র’ গড়ে তুলেছে। সরকারি হাসপাতালসমূহের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে যেকোনো তথ্য বা অভিযোগ মোবাইল ফোনে অথবা ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
  • বাড়িতে বসেই এখন আয়করদাতারা আয়করের হিসাব করতে পারেন এবং রিটার্ন তৈরি ও দাখিল করতে পারেন।
  • পোস্টাল ক্যাশ কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং, ইলেক্ট্রনিক মানি ট্রান্সফার সিস্টেম ইত্যাদির মাধ্যমে বর্তমানে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অর্থ প্রেরণ তুলনামূলক সহজ ও দ্রুততর হয়েছে। ইন্টারনেট ও অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও টাকা স্থানান্তরিত করা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের কিছু জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা হলো- বিকাশ, রকেট, টি-ক্যাশ, নগদ, সিটি টাচ, উপায়, ইজি ক্যাশ।
  • বর্তমানে গ্রাহকরা বিদ্যুৎ, পানিগ্যাস বিল অনলাইনে অথবা মোবাইল ফোনে পরিশোধ করতে পারেন।
  • সকল পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ; স্কুল, কলেজবিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন; পরীক্ষার নিবন্ধন; চাকরির আবেদন; জন্ম নিবন্ধন; ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন ইত্যাদি ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে।
  • বর্তমানে প্রায় সকল ট্রেন, বাসপ্লেনের টিকিট অনলাইনে বা মোবাইলে সংগ্রহ করা যায়।
  • সরকারের বড় বড় উন্নয়নমূলক কাজে টেন্ডার নিয়োগের জন্য বর্তমানে ‘ই-টেন্ডার’ নামক বিশেষ ওয়েব পোর্টাল ব্যবহার করা হচ্ছে বলে এসকল কাজে জটিলতা হ্রাস পেয়েছে।
  • ২০১৮ সালের ১২ মে মহাকাশে প্রেরণ করা হয় বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ (বর্তমানে 'বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-১')। ফলে ৫৭ তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইটের অধিকারী হয় বাংলাদেশ।
  • বিশ্বের ৯ম দেশ হিসেবে পরীক্ষামূলকভাবে বাংলাদেশে 5G ইন্টারনেট চালু হয় ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর।
  • ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ বাংলাদেশের ২য় কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-২ তৈরী ও মহাকাশে উৎক্ষেপনের জন্য রুশ প্রতিষ্ঠান গ্লাভকসমস (Glavkosmos) এর সাথে চুক্তি করে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লি. (BSCL).
  • দেশের প্রথম বাংলা ভাষাভিত্তিক ব্রাউজার 'দুরন্ত' যাত্রা শুরু করে ২৮ শে ফেব্রুয়ারি ২০২১।
  • সারাদেশে উন্নত ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ এবং বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশ বর্তমানে দুইটি সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত, যথাঃ SEA-ME-WE-4 ও SEA-ME-WE-5।
  • ১ ডিসেম্বর ২০২০ তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল SEA-ME-WE-6 স্থাপনের প্রকল্প অনুমতি দেয় মন্ত্রিসভা।
  • ইন্টারনেটে বাংলায় তথ্য অনুসন্ধানের জন্য বাংলাদেশের প্রযুক্তিবিদরা তৈরি করেছিল দেশের প্রথম নিজস্ব বাংলা ওয়েব অনুসন্ধান ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’ (বর্তমানে বন্ধ)।
  • সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের প্রযুক্তিবিদরা তৈরি করেছেন ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন’ বা ইভিএম।
  • এস্তোনিয়াভিত্তিক ‘ই-গভর্নেন্স একাডেমি ফাউন্ডেশন’-এর করা জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সূচকে বিশ্বের ১৬০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৮তম, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান ১ম। (২৪/০৮/২০২১ তারিখে সর্বশেষ হালনাগাদকৃত)

চিত্রশালা

[সম্পাদনা]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

উৎস তালিকা

[সম্পাদনা]
  1. "২০২১ সালের পাঠ্যপুস্তক"জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। ২৩ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০২১ 
  1. প্রথম আলো-অনলাইন পত্রিকা
  2. প্রতিদিনের সংবাদ-অনলাইন পত্রিকা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে
  3. দৈনিক করতোয়া ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ অক্টোবর ২০২১ তারিখে-সংখ্যাঃ ২৪/০৮/২০২১ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে (সাইবার নিরাপত্তায় দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম বাংলাদেশ) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]