বিষয়বস্তুতে চলুন

জগৎ (জীববিদ্যা)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে


জীবনঅধিজগৎজগৎপর্বশ্রেণীবর্গপরিবারগণপ্রজাতি
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাসের প্রধান আটটি শ্রেণীবিন্যাস ক্রমের নিন্মতম থেকে উচ্চতম পর্যায় পর্যন্ত ক্রমবিভক্তি। অন্তর্বর্তী অপ্রধান ক্রমগুলো দেখানো হয়নি।

জগৎ বা জগৎ হচ্ছে জীববিজ্ঞানর একটি বিশেষ শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যার দ্বিতীয় বৃহত্তম ট্যাক্সনমিক ধাপ যা বর্গের উপরে ও পর্বের নিচে অবস্থান করে।

সভ্যতার শুরু থেকে এ পর্যন্ত জীবজগতকে শ্রেণিবিন্যাস করার জন্য বহু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুরুতে শ্রেণিবিন্যাসের ভিত্তি বিজ্ঞানসম্মত ছিল না। তখন শ্রেণিবিন্যাস ছিল মূলত আমাদের প্রয়োজন ভিত্তিক। যেমনঃ খাদ্য, আশ্রয় এবং পোষাকের জন্য। নিউটন সর্বপ্রথম কিছুটা বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তির উপর শ্রেণিবিন্যাস করার উদ্যোগ নেন। তিনি কিছু সাধারণ অঙ্গসংস্থানগত (morphological) বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে উদ্ভিদদের তিনটি বিভাগে ভাগ করেন - বৃক্ষ (trees), গুল্ম (shrubs) এবং লতা (herbs)। তিনি প্রাণীদের দুটি বিভাগে ভাগ করেন - লাল রক্তযুক্ত প্রাণী এবং লাল রক্তবিহীন প্রাণী। ক্যরোলাস লিনিয়াসের সময়ে উদ্ভিদ জগৎ এবং প্রাণী জগৎ - এই দুই জগৎের শ্রেণিবিন্যাস গঠিত হয়। এই দুই জগৎের শ্রেণিবিন্যাস বিংশ শতক পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু, এই দুই জগৎের শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি প্রোক্যারিওট এবং ইউক্যারিওটদের, এককোষী এবং বহুকোষীদের, সালোকসংশ্লেষকারী (সবুজ শৈবাল) এবং ক্লোরোফিলবিহীন পরভোজী (ছত্রাক) জীবদের পৃথক করেনি। জীবজগতকে উদ্ভিদ জগৎে এবং প্রাণী জগৎে শ্রেণিবিন্যাস খুব সরলভাবে করা হয়েছিল এবং বুঝতেও সহজ ছিল। কিন্তু, বিপুল সংখ্যক জীব উদ্ভিদ বা প্রাণী জগৎের একটার মধ্যেও পড়ছিল না। তাই, দীর্ঘকাল যাবৎ ব্যবহৃত হওয়া দুই জগৎের শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি অপর্যাপ্ত বলে পরিগণিত হল। জীব জগতকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে ৷ যথাঃ

  1. মনেরা
  2. প্রোটিস্টা
  3. ছত্রাক
  4. প্লান্টি
  5. অ্যানিম্যালিয়া

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

দুই জগৎ

[সম্পাদনা]

জীবকে কিছু শ্রেণিতে ভাগ করার প্রয়াস আদিকাল থেকেই  চলে আসছে। অ্যারিস্টটল (৩৮৪-৩২২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) তার রচিত ‘হিস্টোরিয়া এনিমেলিয়াম’ গ্রন্থে প্রাণীদেরকে শ্রেণিবিন্যাস করার চেষ্টা করেন। সেই কালেই তার শিষ্য থিওফ্রাস্টাস (৩৭১-২৮৭ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) তার রচিত ‘হিস্টোরিয়া প্ল্যানটেরাম’ গ্রন্থে বৃক্ষের শ্রেণিবিন্যাস করার চেষ্টা করেন। [] কার্ল লিনিয়াস (১৭০৭-১৭৭৮) আধুনিক জীববৈজ্ঞানিক নামকরণের ভিত্তি গড়ে তুলেন। তিনি জীবজগতকে প্রধান দুই ভাগে ভাগ করেন - Regnum Animale (প্রাণি জগত) ও Regnum Vegetabile (উদ্ভিদ জগত)। লিনিয়াস তৃতীয় আরেকটি জগত দাড় করান যার নাম তিনি দেন Regnum Lapideum (খনিজ পদার্থ)

দুই জগৎ

তিন জগৎ

[সম্পাদনা]

১৬৭৪ সালে অ্যন্টনি ভন লিউয়েন হুক, অনুজীববিজ্ঞানের জনক, লন্ডনের রয়েল সোসাইটিতে প্রথম অনুবীক্ষণিক এককোষী জীবের পর্যবেক্ষণের কথা উল্লেখ করেন। এর আগে অনুবীক্ষণিক জীবের অস্তিত্ব সম্পর্কে কারো জানা ছিলো না। শুরুর দিকে এই এককোষী অনুজীবদেরকে জীবজগতে কোনোভাবে রেখে দেওয়া হতো। ১৮৬০ সালে জন হগ একটি তৃতীয় জগৎে, প্রোটোকটিস্টা, এর প্রস্তাব করেন এবং Regnum Lapideum কে চতুর্থ জগৎ হিসেবে গণ্য করেন। []

১৮৬৬ সালে আর্নেস্ট হেকেলও তৃতীয় একটি জগৎের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন এবং তিনি তার নাম দেন প্রোটিস্টা, যারা না প্রাণি জগৎের অন্তর্ভুক্ত না উদ্ভিদ জগৎের অন্তর্গত। তবে তিনি Regnum Lapideum জগৎ হিসেবে গণ্য করেননি। এককোষী প্রাণিদের নিয়ে তিনি যে জগৎ দেন তাঁকে তিনি বলেন, প্রোটিস্টা (Protista) এবং বহুকোষী জীবদেরকে তিনি দুই জগৎে ভাগ করেন ১. প্রাণীজগৎ ও ২. উদ্ভিদজগৎ

তিন জগৎ

চার জগৎ

[সম্পাদনা]

অনুজীববিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধন হলে জানতে পারা যায় এককোষী জীবদের মাঝে আবার দুইটি ভাগ রয়েছে। কিছু এককোষী জীবের নিউক্লিয়াস সুগঠিত হয় আর কিছু জীবের নিউক্লিয়াস সুগঠিত হয়না। ১৯২৫ সালে এডওয়ার্ড চ্যটন দুইটি নতুন শব্দ জীববিজ্ঞানে আনেন ‘প্রোক্যরিয়ট’ (যাদের নিউক্লিয়াস সুগঠিত নয়) ও ইউক্যরিয়ট (যাদের নিউক্লিয়াস সুগঠিত)। [] ১৯৩৮ সালে হার্বার্ট এফ. কোপল্যন্ড জীবজগৎকে চার জগৎে ভাগ প্রস্তাব দান করেন। এই চারটি জগৎের নাম হলো – ১. মনেরা ২. প্রোটিস্টা ৩. প্লান্টি ৪. এনিমেলিয়া। বর্তমানে শনাক্তকৃত ব্যকটেরিয়া ও আর্কিয়া এই মনেরা জগৎের অন্তর্গত। ১৯৬০ এর দিকে রজার স্টেনিয়ার ও সি.বি. ভ্যান নীল এই জগৎের প্রচারে সহায়তা করেন এবং এই জগৎের উর্দ্ধে দুইটি অধিজগতে ভাগ করেন, (১) প্রাককেন্দ্রিক অধিজগৎ ও (২) সুকেন্দ্রিক অধিজগৎ ।

চার জগৎ

পাঁচ জগৎ

[সম্পাদনা]

হুইটটেকার পরবর্তীতে ফানজাইকে আলাদাভাবে একটি জগৎ হিসেবে বিবেচনা করার প্রস্তাব করেন। [] ১৯৬৯ সালে হুইটটেকার তার এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করেন যার ফলে পাঁচ জগৎের জীবজগৎ আমরা পাই। এটি প্রধানত পুষ্টির উপর বিবেচনা করে তৈরি করা হয়েছিলো। এই পাঁচ জগৎকে আমরা দুই অধি জগতের সাথে যোগ করতে পারে। হুইটটেকারের এই পত্র প্রকাশের ফলে উচ্চ বিদ্যালয়ের বইগুলোতে এই পাঁচ জগৎের সিস্টেমটি ব্যবহার শুরু হয়।

পাঁচ জগৎ

ছয় জগৎ

[সম্পাদনা]

১৯৭৭ সালে, রাবোসোমাল আরএনএ এর ভিত্তিতে কার্ল ওস ও তার সহযোগীরা মনেরাকে দুই ভাগে ভাগ করার চিন্তা করেন। (১) ইউব্যকটেরিয়া (যা পরবর্তীতে যাদেরকে ব্যকটেরিয়া নামকরণ করা হয়) এবং (২) আর্কিব্যকটেরিয়া (যাদেরকে পরবর্তীতে আর্কিয়া নামকরণ করা হয়)। [] এর ফলে ছয় জগৎের জীবজগৎ আমরা দেখতে পাই।

ছয় জগৎ

সংজ্ঞা এবং সংশ্লিষ্ট পদ

[সম্পাদনা]

১৭৩৫ সালে কার্ল লিনিয়াস যখন জীববিজ্ঞানে পদ ভিত্তিক নামকরণ ব্যবস্থা চালু করেন, তখন সর্বোচ্চ পদমর্যাদার নাম দেওয়া হয় "কিংডম" এবং এর পরে আরও চারটি প্রধান পদমর্যাদা দেওয়া হয়-শ্রেণী, বর্গ, গণ এবং প্রজাতি পরবর্তীতে আরও দুটি পদ প্রবর্তিত হয়, ক্রমান্বয়ে জগৎ, পর্ব বা বিভাগ, শ্রেণী, বর্গ, পরিবার, গণ এবং প্রজাতি তৈরি করে।

আরও উপসর্গগুলি যুক্ত করা যেতে পারে, সাবকিংডম বা উপ-জগৎ (সাবগ্রেনাম) এবং ইনফ্রাকিংডম (এছাড়াও ইনফ্রারেনাম নামে পরিচিত) হলো জগৎের অধীনে দুটি উপ-পদ। সুপারকিংডমকে ডোমেন বা জগৎের সমতুল্য বা জগৎ এবং ডোমেন বা সাবডোমেইনের মধ্যে একটি স্বাধীন পদ হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। কিছু শ্রেণীবিভাগ পদ্ধতিতে অতিরিক্ত পদমর্যাদা হিসেবে শাখা (ল্যাটিন: রামুস) সাবকিংডম এবং ইনফ্রাকিংডম এর মধ্যে সন্নিবেশ করা যেতে পারে, যেমন, ক্যাভালিয়ার-স্মিথের শ্রেণীবিন্যাসে প্রোটোস্টোমিয়া এবং ডিউটেরোস্টোমিয়া।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Singer, Charles J. (১৯৩১)। A short history of biology, a general introduction to the study of living things। Oxford। 
  2. Scamardella, Joseph M (১৯৯৯)। Not plants or animals: a brief history of the origin of Kingdoms Protozoa, Protista and Protoctista। International Microbiology। 
  3. Sapp, J.। "The Prokaryote-Eukaryote Dichotomy: Meanings and Mythology"Microbiology and Molecular Biology Reviews 
  4. Scamardella, Joseph M. (১৯৯৯)। Not plants or animals: a brief history of the origin of Kingdoms Protozoa, Protista and Protoctista। International Microbiology। 
  5. Balch, W.E। "An ancient divergence among the bacteria"J. Mol. Evol. 
  6. Cavalier-Smith, T. (১৯৯৮)। "A revised six-kingdom system of life"অর্থের বিনিময়ে সদস্যতা প্রয়োজন: 203–66। ডিওআই:10.1111/j.1469-185X.1998.tb00030.xপিএমআইডি 9809012