বিষয়বস্তুতে চলুন

এলিনর গেরিগ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
এলিনর গেরিগ
ইংরেজি: Eleanor Gehrig
১৯৩৫ সালে এলিনর গেরিগ
জন্ম
এলিনর গ্রেস টুয়াইচেল

(১৯০৪-০৩-০৬)৬ মার্চ ১৯০৪
মৃত্যু৬ মার্চ ১৯৮৪(1984-03-06) (বয়স ৮০)
ম্যানহাটন, নিউ ইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
সমাধিকেনসিকো সেমেটারি, নিউ ইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
পেশাক্রীড়া নির্বাহী, স্মৃতিকথাকার
দাম্পত্য সঙ্গীলু গেরিগ (বি. ১৯৩৩; মৃ. ১৯৪১)

এলিনর গ্রেস টুয়াইচেল গেরিগ (ইংরেজি: Eleanor Grace Twitchell Gehrig; ৬ মার্চ ১৯০৪ – ৬ মার্চ ১৯৮৪) একজন মার্কিন জনহিতৈষী, সামাজিক অবস্থাসম্পন্ন নারী, ক্রীড়া নির্বাহী ও স্মৃতিকথাকার। তিনি মার্কিন বেসবল খেলোয়াড় লু গেরিগের স্ত্রী। গেরিগের মৃত্যুর পর তিনি গেরিগের উত্তরাধিকার প্রচার করেন এবং অ্যামায়োট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস (লু গেরিগের রোগ নামেও পরিচিত) গবেষণায় অবদান রাখেন।

১৯৭৬ সালে তিনি তার আত্মজীবনী মাই লিউক অ্যান্ড আই প্রকাশ করেন। ১৯৪২ সালে লু গেরিগের জীবনী নিয়ে নির্মিত ক্রীড়া-নাট্যধর্মী চলচ্চিত্রে দ্য প্রাইড অব ইয়াঙ্কিস-এ এলিনরের ভূমিকায় অভিনয় করে টেরিসা রাইট শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।

জীবনী

[সম্পাদনা]

প্রারম্ভিক জীবন

[সম্পাদনা]

এলিনর টুয়াইচেল ১৯০৪ সালে ৬ই মার্চ ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের শিকাগো শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতা নেলি (কুমারী নাম: মালভেনি; ১৮৮৪-১৯৬৮) এবং পিতা ফ্রাঙ্ক টুয়াইচেল।[] তার ফ্রাঙ্ক নামে এক ভাই ছিল।[] এলিনর তার স্মৃতিকথায় লিখেন তিনি বিশ বছর-ঊর্ধ্ব উচ্ছ্বসিত প্রজন্মের একজন মানুষ এবং শিকাগোতে থাকাকালীন তিনি শিকাগোর সামাজিক সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় পার্টি-প্রেমী মেয়ে হিসেবে জীবনযাপন করতেন। এরকম একটি পার্টিতে গেরিগ শিকাগোতে খেলার জন্য গেলে এলিনরের সাথে তার দেখা হয়।[]

ক্রীড়াজীবনের শীর্ষ অবস্থানে থাকাকালীন তার স্বামী গেরিগের সে সময়ে অল্প-পরিচিত অ্যামায়োট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস (এএলএস) রোগ, যা পরবর্তীকালে লু গেরিগের রোগ নামে পরিচিত লাভ করে, ধরা পরলে তিনি ১৯৩৯ সালে অবসর নিতে বাধ্য হন। গেরিগ ১৯৪১ সালে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে এই রোগে ভুগে মারা যান। গেরিগের বেসবল ক্রীড়াজীবনে এলিনর তার সাথে দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে সফর করেন এবং তার জীবনের শেষ সময়ে তার সেবা-শুশ্রুষা করেন।[]

দাতব্য কর্মকাণ্ড

[সম্পাদনা]

গেরিগের মৃত্যুর পর এলিনর গেরিগের সম্পদের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি তার স্বামীর স্মারক নিলামে তুলে ছয় মিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিল সংগ্রহ করেন। তিনি আমেরিকান রেড ক্রস মটর কর্পসের সাথে কাজের জন্য তালিকাভুক্ত হন। তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট তার প্রচেষ্টার জন্য তার প্রশংসা করেন এবং তার সাথে দেখা করার জন্য তাকে লিটল হোয়াইট হাউজে ডেকে পাঠান।[] ১৯৬০-এর দশকে তিনি একটি অ্যালকোহল ব্র্যান্ডকে তাদের বিজ্ঞাপনের কাজের গেরিগের ছবি ব্যবহার করতে মানা করেন, এবং চান যেন তার স্বামীর ছবি জনকল্যাণে ব্যবহার করা হয়।[]

এলিনর মাসকুলার ডিস্ট্রফি অ্যাসোসিয়েশনের বোর্ডে ন্যাশনাল ক্যাম্পেইন চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[] তিনি কংগ্রেসের কাছে এই রোগের গবেষণার জন্য তহবিল প্রদান এবং মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের উপর একটি জাতীয় ইনস্টিটিউট নির্মাণ ও তহবিলের জন্য আবেদন করেছিলেন।[]

ক্রীড়া নির্বাহী

[সম্পাদনা]

১৯৪৫ সালে এলিনর ন্যাশনাল ফুটবল লিগে (এনএফএল) প্রতিযোগিতা করার জন্য নব্য গঠিত পেশাদার ফুটবল লিগ অল-আমেরিকা ফুটবল কনফারেন্সের (এএএফসি) ভাইস প্রেসিডেন্ট হন।[] এর ফলে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম মহিলা ক্রীড়া লিগ নির্বাহী।[]

মৃত্যু ও উত্তরাধিকার

[সম্পাদনা]
কেনসিকো সেমেটারিতে লু ও এলিনর গেরিগের সমাধিফলক।

এলিনর ১৯৮৪ সালের ৬ই মার্চ তার ৮০তম জন্মদিনে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি আর কখনও বিয়ে করেননি এবং তার কোন উত্তরসূরিও ছিল না। তিনি তার সারাজীবন তার স্বামী ও তার উত্তরাধিকারের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। তিনি রিপ ভ্যান উইঙ্কল ফাউন্ডেশনে ১০০,০০০ মার্কিন ডলার অনুদান প্রদান করেন, যারা পরবর্তীকালে এএলএস রোগের গবেষণা সহায়তা ও গেরিগের উত্তরাধিকার রক্ষার্থে দ্য লু গেরিগ সোসাইটি গঠন করে।[১০] এছাড়া তিনি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০০,০০০ মার্কিন ডলার অনুদান প্রদান করেন, যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে এলিনর অ্যান্ড লু গেরিগ এএলএস সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়।[১১] তিনি তার কাছে থাকা গেরিগের বাকি স্মারক ন্যাশনাল বেসবল হল অব ফেম অ্যান্ড মিউজিয়ামে দান করেন।[১২] ২০০৩ সালে সাংবাদিক শন কার্স্ট "দ্য এসেজ অব লু গেরিগ" নামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন, যেখানে ভাঙচুরের কারণে গেরিগের সমাধির প্রতি এলিনরের উদ্বেগ এবং তার মৃত্যুর পর তার ছাই তার সমাধিতে মিশিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।[১৩]

গণমাধ্যমে চিত্রায়ন

[সম্পাদনা]

১৯৪২ সালের চলচ্চিত্র দ্য প্রাইড অব দ্য ইয়াঙ্কিস-এ টেরিসা রাইট এলিনরের ভূমিকায় অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে সফল হয় এবং ১১টি একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করে। এলিনর চলচ্চিত্রটির উপদেষ্টা ছিলেন এবং তার জীবনীর স্বত্ব হিসেবে ৩০,০০০ মার্কিন ডলার অর্থ পান। টেরিসা রাইট তার অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[১৪]

১৯৪৩ সালে লাক্স রেডিও থিয়েটারের প্রযোজনায় একটি টেলিভিশন নাটকে ভার্জিনিয়া ব্রুস এবং ১৯৪৯ সালের স্ক্রিন ডিরেক্টরস প্লেহাউজের প্রযোজনায় একটি নাটকে লুরেন টাটল এলিনরের ভূমিকায় অভিনয় করেন।

১৯৭৬ সালে তার আত্মজীবনী থেকে আ লাভ অ্যাফেয়ার: দি এলিনর অ্যান্ড লু গেরিগ স্টোরি নামে একটি টেলিভিশন চলচ্চিত্র নির্মিত হয়, এতে এলিনরের ভূমিকায় অভিনয় করেন ব্লাইদ ড্যানার। টেলিভিশন চলচ্চিত্রটি দুটি এমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করে।[১৫]

স্মৃতিকথা

[সম্পাদনা]
  • মাই লিউক অ্যান্ড আই, ১৯৭৬, নিউ ইয়র্ক: টমাস ওয়াই. ক্রোওয়েল কোং

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Eleanor Gehrig in US, Social Security Death Index"Fold3 (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২৫ 
  2. "Eleanor Gehrig"SABR.ORG (ইংরেজি ভাষায়)। সোসাইটি ফর আমেরিকান বেসবল রিচার্চ। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২৫ 
  3. ক্যাস্ট্রো, টনি (১ এপ্রিল ২০১৮)। Gehrig and the Babe: The Friendship and the Feud, Ch. 6, Eleanor (ইংরেজি ভাষায়)। ট্রায়াম্ফ বুক। আইএসবিএন 978-1-64125-004-7। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২৫ 
  4. ""I Can't Get to First Base with You" | Changes in the Lineup | The Promise of Baseball | Explore | Baseball Americana | Exhibitions at the Library of Congress"লাইব্রেরি অব কংগ্রেস, ওয়াশিংটন, ডি.সি.। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২৫ 
  5. ক্যাশাটাস, উইলিয়াম সি. (৩০ আগস্ট ২০০৪)। Lou Gehrig: A Biography (ইংরেজি ভাষায়)। ব্লুমসবারি একাডেমিক। আইএসবিএন 978-0-313-32866-4। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২৫ 
  6. "Yankees Fan Selling Gehrig Items to Pay His Red Sox-Loving Grandkids' College Costs (Published 2019)"দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২৫ 
  7. "MDA's Fight Against ALS" (পিডিএফ)MDA.Org। মাসকুলার ডিস্ট্রফি অ্যাসোসিয়েশন। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২৫ 
  8. "The Iron Woman Behind the Iron Horse"ALSA.org। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২৫ 
  9. The Don: Los Angeles Dons — Brooklyn Dodgers, September 13, 1946: Official Program. Los Angeles, CA: Los Angeles Dons, 1946; p. 6.
  10. "The Lou Gehrig Society, ALS Research, and Dr. Caldwell B. Esselstyn"thelougehrigsociety.org। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২৫ 
  11. "Eleanor and Lou Gehrig ALS Center -About Us"Eleanor and Lou Gehrig ALS Center (ইংরেজি ভাষায়)। ২২ এপ্রিল ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২৫ 
  12. "The widow of Yankee immortal Lou Gehrig gave his... - UPI Archives"UPI (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২৫ 
  13. কার্স্ট, শন (২০০৩), The Ashes of Lou Gehrig 
  14. "The Star Nobody Knows"দ্য পোস্ট-স্ট্যান্ডার্ড। ৩০ মার্চ ১৯৪৭। পৃষ্ঠা 32। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২৫ 
  15. "A Love Affair: The Eleanor and Lou Gehrig Story"টেলিভিশন একাডেমি (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২৫ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]