ইসলামে নারী
ইসলাম |
---|
বিষয়ক ধারাবাহিক নিবন্ধের অংশ |
![]() |

মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী ইসলাম হল মানুষের জন্য আল্লাহর প্রেরিত জীবন বিধান। মুসলিম নারীদের অভিজ্ঞতাবিভিন্ন সমাজের মধ্যে এবং বিভিন্ন সমাজের মধ্যে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়।[৪]
কুরআনে বেশ কয়েকজন নারীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে শুধু একজনেরই নামসহ উল্লেখ করা হয়েছে। আর তিনি হলেন মারিয়াম। এমনকি বাইবেলেও এতবার উল্লেখ করা হয়নি। গোটা একটা সূরাই তার নামে নামকরন করা হয়েছে, যেটা সূরা মারইয়াম নামে পরিচিত[৫]। কুরআন অনুসারে, তিনি জন্মথেকেই আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত। অল্পবয়সেই তিনি ফেরেস্তা প্রধান জীব্রাইলের মাধ্যমে আল্লাহর দেয়া বার্তা পান, যে তিনি তাকে নির্বাচিত করেছেন, পবিত্র করেছেন এবং তাকে উল্লেখযোগ্য করেছেন "দুনিয়ার সমস্ত নারীর মধ্য থেকে"[৬][৭][৮]।
ইসলামি আইন
[সম্পাদনা]সুন্নি আইনশাস্ত্রবিদদের জন্য চারটি শরিয়াহর উৎস রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দুটি কুরআন ও হাদিস প্রাথমিক উৎস হিসেবে গণ্য হয়, আর পরবর্তী দুটি হলো ইজমা ও কিয়াস—গৌণ উৎস হিসেবে বিবেচিত। বিভিন্ন মুসলিম সম্প্রদায় এবং ইসলামি আইনশাস্ত্রের বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অতিরিক্ত বা পরিপূরক উৎসগুলো ভিন্ন হয়ে থাকে। যেসব ওলামা ফতোয়া দেন এবং ইজতিহাদ চর্চা করেন, তারা এই উৎসগুলো ব্যবহার করতে পারেন।[৯] [১০] [১১]
প্রাথমিক
[সম্পাদনা]সুন্নি ইসলামে, নারীদের জন্য কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত কিছু নীতিমালা রয়েছে। ফিকহ (ইসলামি আইনশাস্ত্র) অনুযায়ী, এই নীতিমালাগুলোর ব্যাখ্যা এবং হাদিস গবেষণার মাধ্যমে সুন্নি আলেমদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ যেসব হাদিসকে সন্দেহাতীতভাবে বিশুদ্ধ বলে মনে করেন, সেগুলোর ভিত্তিতে নারীদের জন্য বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।[১২] [১৩] কুরআন অনুসারে, পুরুষ এবং নারীদের সমান নৈতিক ক্ষমতা রয়েছে এবং তারা উভয়েই পরকালে সমান পুরস্কার লাভ করবে। [১৪]
ইসলামের নবী মুহাম্মদ তার জীবদ্দশায় নয় বা এগারো জন নারীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, যা তার স্ত্রীদের সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনার ওপর নির্ভর করে। প্রাক-ইসলামি আরব সংস্কৃতিতে, বিবাহ সাধারণত গোত্রের বৃহত্তর প্রয়োজন অনুযায়ী সম্পন্ন হতো এবং এটি গোত্রের অভ্যন্তরে ও অন্যান্য গোত্রের সঙ্গে জোট গঠনের প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে স্থাপিত হতো। বিবাহের সময় কুমারীত্বকে গোত্রীয় সম্মানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হতো।[১৫] উইলিয়াম মন্টগোমারি ওয়াট বলেন যে মুহাম্মদের সকল বিবাহই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সুদৃঢ় করার রাজনৈতিক দিক বহন করে এবং তা প্রাক-ইসলামী আরবীয় প্রথার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত ছিল।[১৬]
নারীশিক্ষা
[সম্পাদনা]
কুরআন ও হাদিস
[সম্পাদনা]কুরআন, হাদিস এবং সুন্নাহ (মুহাম্মদের বাণী ও কর্মের দৃষ্টান্ত) অনুযায়ী নারী ও পুরুষ উভয়ের জ্ঞানার্জনের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানায়।[১৮] কুরআন সকল মুসলমানকে, তাদের লিঙ্গ পরিচয় নির্বিশেষে, জ্ঞানার্জনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর নির্দেশ দেয়। এটি ক্রমাগত মুসলমানদেরকে প্রকৃতিতে বিদ্যমান আল্লাহর নিদর্শনসমূহ থেকে পাঠ গ্রহণ, চিন্তা-ভাবনা, গভীরভাবে অনুধাবন এবং শিক্ষা অর্জনে উৎসাহিত করে।[১৮] অধিকন্তু মুহাম্মদ পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য শিক্ষা অর্জনে উৎসাহিত করেন: তিনি ঘোষণা করেন যে জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মুসলিম পুরুষ ও নারীর জন্য একটি ধর্মীয় কর্তব্য।[১৯] পুরুষের মত প্রত্যেক নারীই নীতিগত ও ধর্মিয় এমন বাধ্যবাধকতার অন্তর্ভূক্ত। যাতে তিনি জ্ঞানঅন্বেষণ করেন, নিজের বুদ্ধিবৃত্তিক সমৃদ্ধির চেষ্টা করেন, মননকে সমৃদ্ধ করেন, নিজের মেধা-প্রতিভার চর্চা করেন যাতে তার সুপ্ত সম্ভাবনার দ্বারা নিজে এবং তার সমাজ উপকার লাভ করতে পারে।[২০]
নারীদের ঘরের বাইরে যাওয়া
[সম্পাদনা]নারীদের ঘরের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআনের সূরা আহযাবে বলা হয়েছে,
“ | "হে নবী, বলুন আপনার স্ত্রী ও কন্যাদেরকে এবং বিশ্বাসী নারীদেরকে যে, তাঁরা যেন তাঁদের বহিরাবরণ পরে থাকে (যখন বাইরে যাবে)। এটা তাঁদের পরিচিতির অত্যন্ত উপযোগী। (তাঁরা যেন পরিচিত হয় বিশ্বাসী নারী হিসেবে) তাহলে আর অহেতুক উৎপিড়ীত হবে না। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল দয়াবান।"৩৩:৫৯[২১] | ” |
সাধারণত ইসলাম সর্বাবস্থায় নারীদের ঘরে আবদ্ধ করে রাখার কথা বলে না। এ সম্পর্কে হযরত আয়েশা থেকে বর্ণিত,
“ | "রাসূল বলেন, অবশ্যই প্রয়োজনে তোমাদের (নারীদের) বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে।"৪৪৩৬[২২] | ” |
তবে, সেক্ষেত্রে দূর যাত্রা হলে সাথে মাহরাম নিতে হবে। মাহরাম হল সাথে কোনো পুরুষ অভিভাবক থাকা। এ সম্পর্কে সহীহ বোখারী শরীফে হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত,
“ | "রাসূলুল্লাহ বলেছেন, মাহরামের উপস্থিতি ব্যতীত কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবে না। এক ব্যক্তি ওঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার স্ত্রী হজ্বে বেরিয়ে গেছে। এবং অমুক অমুক জিহাদে অংশগ্রহণের জন্য আমার নাম তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। নবী বললেন, ফিরে যাও এবং স্ত্রীর সাথে হজ্ব সমাপন কর।"৪৮৫৭[২২] | ” |
পর্দা
[সম্পাদনা]ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, অশ্লীলতা ও ব্যভিচার নিরসনের লক্ষ্যে নারী-পুরুষ উভয়েরই তাদের নিজ নিজ রূপ-লাবণ্য ও সৌন্দর্যকে একে অপরের চোখ থেকে আড়ালে রাখার জন্য ইসলামে যে বিশেষ ব্যবস্থা অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছে, তাকে হিজাব বা পর্দা বলা হয়।[২৩] ইসলাম মুসলমান নারী এবং পুরুষ উভয়ের ওপর পর্দা ফরজ করে দিয়েছে। এ সম্পর্কে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআনের সূরা নূরে বলা হয়েছে,
“ | "প্রত্যেক বিশ্বাসী পুরুষদের বল, তাঁরা যেন তাঁদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে। এবং তাঁদের লজ্জাস্থান সমূহ হেফাজত করে। এটাই তাঁদের জন্য উত্তম পন্থা। আল্লাহ তায়ালা সে বিষয়ে সম্পূর্ণ অবগত। এবং বিশ্বাসী নারীদেরকে বল, তাঁরা যেন তাঁদের দৃষ্টি অবনত রাখে। এবং তাঁদের লজ্জাস্থান সমূহের সংযত সংরক্ষণ করে এবং তাঁদের দৈহিক সৌন্দর্য ও অলংকারের প্রদর্শনী না করে। তবে, অনিবার্য ভাবে যা উন্মুক্ত থাকে (তাতে কোনো দোষ নেই)। তাঁরা যেন তাঁদের বক্ষের ওপরে চাদর ঝুলিয়ে দেয় এবং তাঁদের স্বামী, তাঁদের পিতা, শ্বশুর এবং সন্তানদের ছাড়া তাঁদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে।"২৪:৩০-৩১[২১] | ” |
ইসলামের গবেষকেরা এই আয়াত সমূহ এবং এ সংক্রান্ত হাদিসের ওপর ভিত্তি করে, নারী-পুরুষের পর্দার একটা সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে পুরুষের জন্য বাধ্যতামূলক হল, কমপক্ষে নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত ঢেকে রাখা। আর নারীর জন্য বাধ্যতামূলক হল, কমপক্ষে দুই হাতের কব্জী এবং মূখ মন্ডল ছাড়া পুরো শরীর ঢেকে রাখা। কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ বলেন, তাও ঢেকে রাখতে হবে।কারন চেহারা হচ্ছে সৌন্দর্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ । এছাড়া পর্দার বাকি শর্তগুলো হল: পরিধেয় পোশাক ঢিলেঢালা হবে। যেন দেহের মূল কাঠামো প্রকাশ না পায়। পোশাক এত পাতলা ও স্বচ্ছ হবে না, যাতে ভেতরটা দেখা যায়। পোশাক বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করার মত আকর্ষণীয় হবে না। পোশাকের ধরন বিপরীত লিঙ্গের মত হবে না। এবং পোশাকের ধরন অবিশ্বাসীদের মত হবে না। এই শর্তগুলো নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য একই রকম।
উত্তরাধিকার
[সম্পাদনা]উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআনে সূরা নিসায় বলা হয়েছে,
“ | "তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে আল্লাহ তোমাদেরকে এই বিধান দিচ্ছেন: পুরুষের অংশ দুই নারীর সমান হবে। যদি দুই জনের বেশি নারী হয়, তাহলে সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ দেয়া হবে। আর একজন নারী হলে মোট সম্পদের অর্ধেক পাবে। মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকলে, তাঁর পিতা-মাতা প্রত্যেকে ছয় ভাগের এক ভাগ করে পাবে। আর সে যদি নিঃসন্তান হয়, পিতা-মাতাই হয় উত্তরাধিকারী, তাহলে মাকে দেয়া হবে তিন ভাগের একভাগ। মৃতের ভাই বোন থাকলে মা সেই ছয় ভাগের এক ভাগ পাবে। এসব বণ্টন মৃতের কোনো অসীয়ত থাকলে, তা এবং ঋণ থাকলে তা আদায় করার পরে। তোমাদের পিতা-মাতা এবং তোমাদের সন্তান-সন্ততী, তোমাদের জানা নাই এঁদের মধ্যে তোমাদের কল্যাণের দিক দিয়ে কারা ঘনিষ্টতর। এই বণ্টন ব্যবস্থা ফরজ করে দেয়া হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আল্লাহ তো সব কিছুর ব্যপারেই পূর্ণ অবহিত এবং তিনিই হচ্ছেন বিজ্ঞ, পরম কুশলী। আর তোমাদের স্ত্রীরা যা কিছু রেখে গেছে, তার অর্ধেক তোমরা পাবে যদি তাঁরা নিঃসন্তান হয়। সন্তান থাকলে তোমরা পাবে ত্যক্ত সম্পত্তির চার ভাগের একভাগ। তাঁদের করে যাওয়া অসীয়ত এবং দেনা থাকলে, তা সব আদায়ের পর। আর তোমাদের রেখে যাওয়া সম্পদের তাঁরা পাবে চারভাগের একভাগ, যদি তোমাদের কোনো সন্তান না থাকে। সন্তান থাকলে তাঁরা পাবে আট ভাগের একভাগ। তাও কার্যকর হবে তোমাদের কোনো অসীয়ত এবং দেনা থাকলে তা আদায়ের পর। আর যদি এমন কোনো পুরুষ অথবা স্ত্রীলোক, যাঁর না আছে কোনো সন্তান, আর না আছে পিতা-মাতা। আছে এক ভাই অথবা এক বোন তাহলে তাঁদের প্রত্যেকে পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ। আর ভাই বোন যদি দুই এর বেশি হয়, তাহলে তাঁরা সবাই মিলে মোট সম্পদের তিন ভাগের একভাগ পাবে। তাও কোনো অসীয়ত এবং ঋণ থাকলে তা আদায়ের পর। কোনোভাবেই কারো কোনো ক্ষতি করা বা হতে দেয়া যাবে না। (এসব কিছু) আল্লাহর দেয়া উপদেশমালা। আর আল্লাহ সব কিছুর ব্যাপারেই পূর্ণ অবহিত এবং পরম ধৈর্য্যশীল।"৪:১১-১২[২১] | ” |
এবং
“ | "তাঁরা আপনার কাছে ফতোয়া জানতে চায়। বলুন, আল্লাহ তোমাদেরকে ফতোয়া দিচ্ছেন, নিঃসন্তান ও পিতৃ-মাতৃহীন মৃত ব্যক্তির সম্পদ বণ্টন সম্পর্কে। যদি এমন ব্যক্তি মারা যায়, যাঁর কোনো সন্তান নেই, আছে এক বোন। তাহলে সে পাবে সম্পদের অর্ধেক আর যদি বোন মারা যায় তাহলে ভাই পুরো সম্পদের উত্তরাধিকারী হবে। মৃতের উত্তরাধিকারী যদি দুই বোন হয়, তাহলে ত্যক্ত সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগ তাঁরা পাবে। আর যদি কয়েকজন ভাই-বোন হয়, তাহলে পুরুষেরা পাবে দুই ভাগ, আর নারীরা পাবে এক ভাগ। আল্লাহ স্পষ্ট করে দিচ্ছেন তোমাদের জন্য যেন তোমরা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে না যাও। প্রত্যেকটি জিনিস সম্পর্কেই আল্লাহ পূর্ণ অবহিত।"৪:১৭৬[২১] | ” |
আয়াতত্রয়ীর বর্ণনা মতে, ত্যক্ত সম্পত্তির বণ্টনের বেলায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ দুজনেই সমান। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারী এগিয়ে। তবে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষ এগিয়ে।
সাক্ষী
[সম্পাদনা]মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে সূরা বাক্বারায় বলা হয়েছে,
“ | "হে ঈমানদারগণ, যদি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য তোমরা একে অপরের সাথে লেনদেন কর, তাহলে তা লিখে নিয়ো। অতঃপর তোমাদের নিজেদের মধ্যের দুজন পুরুষকে সাক্ষী বানাও। তখন যদি দুজন পুরুষের আয়োজন না করা যায়, তাহলে একজন পুরুষ এবং যাঁদের সাক্ষীর ব্যপারে তোমরা আস্থাশীল এমন দুজন নারী বেছে নাও। যেন, একজন ভুল করলে অন্যজন স্মরণ করিয়ে দিতে পারে।"২৮২[২১] | ” |
ইসলামী সমাজে নারী এবং পুরুষের প্রকৃতি এবং ভূমিকার পার্থক্যের ভিত্তিতে সাক্ষী দানের ক্ষেত্রে আলাদা মানদন্ড নির্ধারণ করেছে। লিঙ্গ বৈষম্য এক্ষেত্রে বিবেচ্য নয়। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
মুসলমানদের কাছে তাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনের পরই নির্দেশনার জন্য মূল্যবান যে উৎস, তা হচ্ছে হাদিসগ্রন্থ।
“ | "আবূ সা‘ঈদ খুদরী সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নারীদের সাক্ষ্য কি পুরুষদের সাক্ষ্যের অর্ধেক নয়? উপস্থিতরা বলল, অবশ্যই অর্ধেক। তিনি বলেন, এটা নারীদের জ্ঞানের ত্রুটির কারণেই। (৩০৪)" (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৪৮২)[২৪][২৫] | ” |
হযরত আবু হুরায়রা সর্বাধিক ৫৩৭৪ টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। আর তার বর্ণিত হাদিস সমূহ শুধু তার একক স্বাক্ষীর ওপরেই বিশুদ্ধতার সকল বিবেচনায় উত্তীর্ণ।[২৬] আবার হাদিসগ্রন্থ সমূহের মধ্যে হযরত আয়েশা থেকে বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ২২১০ টি। যা সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তিনি একজন নারী। আর তার বর্ণিত হাদিস সমূহও শুধু তার একক সাক্ষ্যের ওপরেই বিশুদ্ধতার সকল বিবেচনায় উত্তীর্ণ।[২২] এক্ষেত্রে নারী-পুরুষে কোনো পার্থক্য নেই। ঘটনার প্রকৃতি ও ভূমিকা ঠিক থাকলে, ইসলামে একজন নারী সাক্ষীই যথেষ্ট। ইসলামী আইনশাস্ত্রবিদেরা অনেকেই এ ব্যাপারে একমত [তথ্যসূত্র প্রয়োজন], যে চাঁদ দেখার ব্যপারে একজন বিশ্বাসী নারীর সাক্ষীই যথেষ্ট। তবে, ঘটনার প্রকৃতি এবং ভূমিকা বদলে গেলে সাক্ষীর ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের পার্থক্য সৃষ্টি হয়ে যায়। সাধারণত ইসলাম পর্দার বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। তাই ইসলাম নারীদের ওপর কোনো অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতা বা দায়দায়িত্ব আরোপ করেনি। যেসব ক্ষেত্রে ঘটনার প্রকৃতি আর্থিক এর মত (ইসলামী মতে যা অধিক পুরুষ সংশ্লিষ্ট) সেসব ক্ষেত্রে নারীদের তুলনায় পুরুষ সাক্ষীর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
বিবাহ
[সম্পাদনা]ইসলাম ধর্ম অনুসারে কোন নারী এক সাথে একাধিক স্বামী গ্রহণ করতে পারবে না। তবে, একজন পুরুষ একাধিক (সর্বোচ্চ চারজন) নারীর সাথে বিবাহে আবদ্ধ হতে পারবে।[২২] তবে, পুরুষদের মতই একজন নারী তার পছন্দের সৎপুরুষের কাছে নিজেকে বিয়ের জন্য পেশ করতে পারবে।[২২] কোনো অভিভাবক বা পুরুষ কোনো বিধবা অথবা কুমারী মহিলাকে তার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে করতে বা দিতে পারবে না।[২২] এমনকি নারীর অনুমতি ব্যতীত অভিভাবক তাকে বিয়ে দিলে তা বাতিল করা যাবে। এ সম্পর্কে হযরত খানসা বিনতে খিযাম আল আনসারিয়া থেকে বর্ণিত,
“ | "যখন তিনি বয়স্কা ছিলেন তখন তাঁর পিতা তাঁকে বিয়ে দেন। এ বিয়ে তাঁর পছন্দ ছিল না। এরপর রাসূলুল্লাহ এর কাছে গেলে তিনি তা বাতিল করে দেন।"৪৭৬৬ [২২][২৭] | ” |
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- হায়া (ইসলাম)
- কুরআনে নারী
- শরিয়ত
- মরিয়ম বিনতে ইমরান
- ইসলামে লিঙ্গের ভূমিকা
- হুর
- ইসলামি সম্প্রদায় ও শাখা
- ইসলামে যৌনতা
- মুহাম্মাদের স্ত্রীগণ
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মুসলিম নারী
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Translations of the Qur'an, Surah 4: AN-NISA (Women)"। e=Center for Muslim-Jewish Engagement। মে ১, ২০১৫। মে ১, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "Translations of the Qur'an, Surah 39: AZ-ZUMAR (The Troops, Throngs)"। Center for Muslim-Jewish Engagement। আগস্ট ২০, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৪, ২০১৬।
- ↑ Jawad, Haifaa (১৯৯৮)। The Rights of Women in Islam: An Authentic Approach। London: Palgrave Macmillan। পৃষ্ঠা 85–86। আইএসবিএন 978-0-333-73458-2।
- ↑ Bodman, Herbert L.; Tawḥīdī, Nayyirah (১৯৯৮)। Women in Muslim Societies: Diversity Within Unity (ইংরেজি ভাষায়)। Lynne Rienner Publishers। আইএসবিএন 978-1-55587-578-7।
- ↑ "Surah Maryam"। alqurankarim.net। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-১০।
- ↑ Qur'an 3:42; cf. অনুবাদ. আরবেরি ও পিকথাল; Stowasser, Barbara Freyer, "মেরি", in: এনসাইক্লোপিডিয়া অব কুরআন, সাধারণ সম্পাদক: জেন ডেমিন ম্যাকঅলিফে, জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি, ওয়াশিংটন ডিসি.
- ↑ Enzyklopadie des Islam eslam.de তে "Maria" নামের জার্মান ভাষার নিবন্ধ এর ইংরেজী অনুবাদ
- ↑ Stowasser, Barbara Freyer, "Mary", in: এনসাইক্লোপিডিয়া অব কুরআন, সাধারণ সম্পাদক: জেন ডেমিন ম্যাকঅলিফে, জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি, ওয়াশিংটন ডিসি.
- ↑ Motahhari, Morteza (1983)। Jurisprudence and Its Principles, অনুবাদক: সালমান তাওহিদি, আইএসবিএন ০-৯৪০৩৬৮-২৮-৫।
- ↑ Kamali, Mohammad Hashim। Principles of Islamic Jurisprudence, ক্যামব্রিজ: ইসলামিক টেক্সট সোসাইটি, 1991। আইএসবিএন ০-৯৪৬৬২১-২৪-১।
- ↑ "শরিয়াহ ও ফিকহ"। USC-MSA মুসলিম গ্রন্থসমগ্র। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Haddad এবং Esposito (1998)। Islam, Gender, and Social Change, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, pp. xii–xx।
- ↑ Stowasser, B. F. (1994)। Women in the Qur'an, Traditions, and Interpretation। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস।
- ↑ Asma Afsaruddin (২০২০)। "Women and the Qur'an"। Mustafa Shah এবং Muhammad Abdel Haleem। The Oxford Handbook of Qur'anic Studies। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 527।
এই কোরআনিক আয়াত স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, নারীরা ও পুরুষরা নৈতিক ও আত্মিক বিচারে সমান ক্ষমতার অধিকারী; তারা পৃথিবীতে সৎ ও ন্যায়পরায়ণ জীবনযাপনের জন্য সমান প্রচেষ্টা চালায় এবং এর জন্য পরকালেও একই পুরস্কার লাভ করে।
- ↑ Amira Sonbol, Rise of Islam: 6th to 9th century, Encyclopedia of Women and Islamic Cultures
- ↑ Watt (1956), p. 287.
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;Medina of Fez
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ ক খ যাওয়াদ, হাইফা এ. (১৯৯৮)। দ্য রাইটস অব ইসলাম: অ্যান অথেনটিক অ্যাপ্রোচ। লন্ডন, ইংল্যান্ড: পালগ্রেভ ম্যাকমিলান। পৃষ্ঠা ৮। আইএসবিএন 978-0-333-73458-2।
- ↑ যাওয়াদ, হাইফা এ. (১৯৯৮)। দ্য রাইটস অব ইসলাম: অ্যান অথেনটিক অ্যাপ্রোচ। লন্ডন, ইংল্যান্ড: পালগ্রেভ ম্যাকমিলান। পৃষ্ঠা ৯। আইএসবিএন 978-0-333-73458-2।
- ↑ যাওয়াদ, হাইফা এ. (১৯৯৮)। দ্য রাইটস অব ইসলাম: অ্যান অথেনটিক অ্যাপ্রোচ। লন্ডন, ইংল্যান্ড: পালগ্রেভ ম্যাকমিলান। পৃষ্ঠা ২০। আইএসবিএন 978-0-333-73458-2।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ পবিত্র কোরআনুল করীম (বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তফসীর)। খাদেমুল-হারমাইন বাদশাহ ফাহদ, কোরআন মুদ্রণ প্রকল্প। ১৪১৩ হিজরী। পৃষ্ঠা ১৪৮০ পাতা। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ সহীহ বোখারী শরীফ [১ম হইতে ১০ম খন্ড এক ভলিয়মে সমাপ্ত] অনুবাদ: শায়খুল হাদিস মাওলানা মোহাম্মদ আজীজুল হক। আলহাজ্ব মোঃ সোলায়মান চৌধুরী, একুশে বই মেলা। ২০০৬ সন। পৃষ্ঠা ১১২০ পাতা। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "আল মু‘জামুল ওয়াসীত" ১ম খ-, ১৫৬ পৃষ্ঠা
- ↑ "পরিচ্ছদঃ ৫২/১২. স্ত্রী লোকের সাক্ষ্যদান"। বাংলা হাদিস। Rokon-ul-Haque। সংগ্রহের তারিখ ৬ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ টেমপ্লেট:Ihadis
- ↑ সহীহ মুসলিম শরীফ [১ম হইতে 8ম খন্ড এক ভলিয়মে সমাপ্ত] অনুবাদ: শায়খুল হাদিস মাওলানা মোহাম্মদ আজীজুল হক। আলহাজ্ব মোঃ সোলায়মান চৌধুরী, একুশে বই মেলা। ২০০৭ সন। পৃষ্ঠা ১১০০ পাতা। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ টেমপ্লেট:Ihadis
আরও পড়ুন
[সম্পাদনা]- অ্যান্ড্রিয়া, বার্নাডেট, Women and Islam in Early Modern English Literature, ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০০৮ (আইএসবিএন ৯৭৮-০-৫২১-৮৬৭৬৪১): বার্নাডেট অ্যান্ড্রিয়ার রচনা।
- লীলা আহমেদ, Women and Gender in Islam: Historical Roots of a Modern Debate, ইয়েল ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৯২।
- কারেন আর্মস্ট্রং, The Battle for God: Fundamentalism in Judaism, Christianity and Islam, লন্ডন, হার্পারকলিন্স/রুটলেজ, ২০০১।
- বাফুন, আলিয়া, Women and Social Change in the Muslim Arab World, অন্তর্ভুক্ত: Women in Islam, পারগ্যামন প্রেস, ১৯৮২।
- বেক, লুইস; কেডি, নিকি (১৯৭৮)। "Women in the Muslim World"। ক্যামব্রিজ: হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 9780674954816। ।
- এসপোসিটো, জন এবং ইয়োভন ইয়াজবেক হাদ্দাদ, Islam, Gender, and Social Change, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৯৭, আইএসবিএন ০-১৯-৫১১৩৫৭-৮।
- হ্যাম্বলি, গ্যাভিন, Women in the Medieval Islamic World, প্যালগ্রেভ ম্যাকমিলান, ১৯৯৯, আইএসবিএন ০-৩১২-২২৪৫১-৬।
- জোসেফ, সুয়াদ (সম্পাদক), Encyclopedia of Women and Islamic Cultures, লেইডেন: ব্রিল, খণ্ড ১–৪, ২০০৩–২০০৭।
- রডেড, রুথ (১৯৯৪)। "Women in Islamic Biographical Collections: From Ibn Saʻd to Who's Who"। লিন রেইনার পাবলিশার্স। আইএসবিএন 978-1-55587-442-1। ।
- সেভেনসন, জোনাস, Women's Human Rights and Islam: A Study of Three Attempts at Accommodation, আলমকুইস্ট অ্যান্ড উইকসেল, ২০০১।
- মেহমুদ, মারিয়াম, ১৮ মে ২০২১। Mapping Muslim Moral Provinces: Framing Feminized Piety of Pakistani Diaspora, Religions ১২: ৩৫৬; খণ্ড ২, সংখ্যা ৫। টেমপ্লেট:ডিওআই।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয় আর্কাইভ, ইসলাম – বিশ্ব ইতিহাসে নারীরা, রয় রোজেনজুইগ সেন্টার
- আরব স্টাডিজ জার্নাল – একটি পর্যালোচনাভিত্তিক প্রকাশনা যা প্রায়শই ইসলামে নারীদের বিষয়ে আলোচনা করে।
- উইমেন অ্যান্ড ইসলামিক কালচার এনসাইক্লোপিডিয়া – ব্রিল, নেদারল্যান্ডস।
- অক্সফোর্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনলাইন – ইসলামি সমাজে নারীদের ভূমিকা সম্পর্কিত অসংখ্য এন্ট্রি।
- উইমেন অ্যান্ড ইসলামিক কালচারস: ফ্যামিলি, ল’ অ্যান্ড পলিটিক্স, সম্পাদক: জোসেফ এবং নাজমাবাদী, ব্রিল, নেদারল্যান্ডস, আইএসবিএন ৯৭৮-৯০০৪১২৮১৮৭।