বিষয়বস্তুতে চলুন

আদিবাসী নারীবাদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

 

আদিবাসী নারীবাদ হল নারীবাদের একটি আন্তঃসংযোগমূলক তত্ত্ব ও কার্যপ্রণালী, যা উপনিবেশমুক্তি, আদিবাসী সার্বভৌমত্ব এবং আদিবাসী নারী ও তাদের পরিবারের মানবাধিকারের উপর গুরুত্ব দেয়। এর মূল লক্ষ্য হলো আদিবাসী সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও অগ্রাধিকারকে কেন্দ্র করে নারীদের ক্ষমতায়ন করা, যা মূলধারার শ্বেতাঙ্গ পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোর বিপরীতে অবস্থান করে।[] এই দৃষ্টিভঙ্গি আফ্রিকান-আমেরিকান সম্প্রদায়ের নারীবাদের সাথে তুলনা করা যেতে পারে।

আদিবাসী সম্প্রদায়গুলি বৈচিত্র্যময়। কিছু সমাজে নারীরা এখনও তাদের আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী ও ঐতিহ্যবাহী সমাজের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। তবে অনেক নারী তাদের সম্প্রদায়ে এই ধরনের ভূমিকা হারিয়েছেন, আবার অনেকে পুরোপুরি ঐতিহ্যবাহী সমাজের বাইরে বসবাস করেন। যারা তাদের সম্প্রদায়ে বা বৃহত্তর বিশ্বে ক্ষমতার অবস্থানে আছেন, তাদের লক্ষ্য এবং চাহিদা অনেক সময় তাদের থেকে আলাদা হতে পারে, যারা এখনও মৌলিক মানবাধিকারের জন্য লড়াই করছেন।

আধুনিক আদিবাসী নারীবাদ একটি সামষ্টিক দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে গড়ে উঠেছে, যা আদিবাসী নারীদের মুখোমুখি হওয়া সমস্যাগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলমান গণহত্যা, উপনিবেশবাদ এবং বর্ণবাদের ফলে আদিবাসী নারীদের প্রয়োজন ও লড়াই মূলধারার নারীবাদের চেয়ে ভিন্ন হতে পারে।প্রচলিত নারীবাদ অনেক সময় আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য জরুরি সংকটগুলোকে উপেক্ষা করেছে বা অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখেনি। উদাহরণস্বরূপ, নিখোঁজ ও খুন আদিবাসী নারী (এমএমআইডব্লিউ) কট, আদিবাসী নারীদের জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ, ভূমির অধিকারের লড়াই এবং শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের দ্বারা আদিবাসী মার্কিন নারীদের ওপর অপ্রতিসাম্য যৌন সহিংসতা—এসব বিষয় আদিবাসী নারীবাদের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।[][]

আদিবাসী নারীবাদ উত্তর-ঔপনিবেশিক নারীবাদের নারীবাদের সাথে সম্পর্কিত, কারণ এটি উপনিবেশবাদের ধ্বংসাত্মক প্রভাবকে স্বীকার করে। উপনিবেশবাদ শুধু আদিবাসী জনগণের জীবনযাত্রাকে পরিবর্তন করেনি, তাদের ভূমি, সংস্কৃতি এবং সামাজিক কাঠামোর ওপরও ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। দমনমূলক যে ব্যবস্থা উপনিবেশবাদের মাধ্যমে চালু হয়েছিল, সেগুলো ভেঙে ফেলার জন্য উপনিবেশমুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আদিবাসী নারীবাদ তাই শুধুমাত্র নারী অধিকার নিয়ে কাজ করে না, বরং এটি ভূমির মালিকানা, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা এবং আদিবাসী জাতিসত্তার সার্বভৌমত্বের সাথেও গভীরভাবে জড়িত।[] আদিবাসী নারীবাদে পূর্বপুরুষদের ভূমি ও প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়। বর্তমান সময়ে ভূমি অধিকার ও পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন আদিবাসী নারীবাদের একটি প্রধান দিক। এই কারণে আদিবাসী নারীবাদ কিছু ক্ষেত্রে পরিবেশগত নারীবাদের সাথে মিল রাখে, কারণ দুই ক্ষেত্রেই প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে গভীর সংযোগকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে আদিবাসী নারীবাদ মূলধারার শ্বেতাঙ্গ নারীবাদের থেকে আলাদা। উদার নারীবাদ বা পাশ্চাত্য নারীবাদ প্রায়শই আদিবাসী নারীদের অভিজ্ঞতাকে উপেক্ষা করে এসেছে। তাই "আদিবাসী নারীবাদীরা মনে করেন, তাদের অভিজ্ঞতা, সংগ্রাম এবং সামাজিক বাস্তবতাকে আলাদাভাবে দেখা দরকার।"[] কারণ তাদের জীবনের চ্যালেঞ্জ, ইতিহাস ও লড়াই অন্যান্য নারীদের থেকে ভিন্ন, যা তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকেও আলাদা করে গড়ে তুলেছে।[]

আদিবাসী নারীবাদ ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটি আদিবাসী মার্কিন নারীবাদ, কানাডায় প্রথম জাতি নারীবাদ বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ায় আদিবাসী নারীবাদ বা অ্যাবোরিজিনাল নারীবাদ নামে পরিচিত।[] যদিও "আদিবাসী" শব্দটি বৈশ্বিকভাবে প্রযোজ্য, তবুও "আদিবাসী নারীবাদ" নিয়ে আলোচনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উত্তর আমেরিকার আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান আদিবাসী জনগোষ্ঠী এবং কানাডার আদিবাসী সম্প্রদায়— প্রথম জাতি (ফার্স্ট নেশনস), ইনুইট ও মেটিস (এফএনআইএম)—এর অভিজ্ঞতা বেশি গুরুত্ব পায়। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের আদিবাসী নারীদের সংগ্রাম এবং বাস্তবতা তুলনামূলকভাবে কম আলোচিত হয়। তবে আদিবাসী নারীবাদকে পুরোপুরি উত্তর আমেরিকার প্রেক্ষাপটে সীমাবদ্ধ না রেখে অন্যান্য অঞ্চলের আদিবাসী নারীদের অভিজ্ঞতা এবং লড়াইকেও অন্তর্ভুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।

উপনিবেশবাদের প্রভাব

[সম্পাদনা]

বেশিরভাগ আদিবাসী সম্প্রদায়ে উপনিবেশবাদ নারীদের অবস্থান ও প্রতি ব্যবহারে সবচেয়ে গভীর এবং ক্ষতিকর পরিবর্তন এনেছে। উপনিবেশবাদ শুধু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনেনি, এটি ধর্মকেও অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। খ্রিস্টধর্মকে চাপিয়ে দিয়ে আদিবাসী সমাজের প্রচলিত লিঙ্গ সম্পর্ক ও সামাজিক কাঠামোকে দুর্বল করা হয়েছে।[]

আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে লিঙ্গ সম্পর্ক

[সম্পাদনা]

উপনিবেশবাদের ফলে আদিবাসী জনগণ এক ধরনের বর্ণবাদী পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীন হয়ে পড়ে। এর ফলে তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়। উপনিবেশ-পূর্ব যুগে আদিবাসী নারীরা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। অনেক আদিবাসী সমাজে নারীরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী ছিলেন। কিন্তু ইউরোপীয় উপনিবেশকারীদের কাছে এটি হুমকির মতো মনে হয়েছিল। বিদেশি শাসকেরা "আদিবাসী সংস্কৃতি, বিশেষ করে তাদের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে ভীতি ও বিদ্বেষ" ছড়িয়ে দেয়। এই ভীতি এবং আগ্রাসনের অজুহাতেই গণহত্যা ও দমনমূলক নীতিগুলো কার্যকর করা হয়েছিল।[] উপরন্তু, নারীদের ভূমিকা আদিবাসী সমাজে একেক জায়গায় একেক রকম ছিল "তবে উপনিবেশবাদ সর্বত্র লিঙ্গ সম্পর্কের কাঠামো বদলে নারীদের অধীনস্ত অবস্থানে ঠেলে দিয়েছে। প্রাক-ঔপনিবেশিক যুগে যারা সমাজের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ছিলেন, তাদের ক্ষমতা ও মর্যাদা ধীরে ধীরে ক্ষুণ্ণ হয়েছে, এবং নারীরা সমাজের প্রান্তে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।"[]

আদিবাসী নারীদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান

[সম্পাদনা]

আদিবাসী জনগণের বর্তমান সংগ্রামের মূল কারণ হলো উপনিবেশবাদী শাসকদের আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টা। ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত শ্বেতাঙ্গ ঔপনিবেশিকরা আদিবাসী সমাজে নতুন ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়। এই ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণা, মালিকানার অধিকার এবং লিঙ্গভিত্তিক শ্রম বিভাজনের মতো ধারণা ছিল, যা আদিবাসী সমাজের প্রচলিত রীতিনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল।আদিবাসী নারী ও তাদের ঐতিহ্যগত ভূমিকা এই নতুন ব্যবস্থার কারণে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়।[] অ্যান্ডারসন " এ রিকগনিশন অফ বিয়িং: রিকন্সট্রাকটিং নেটিভ ওম্যানহুড (A Recognition of Being: Reconstructing Native Womanhood)" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, "ব্যক্তিগত ও সরকারি শ্রমের মধ্যে পার্থক্য তৈরি এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতি চাপিয়ে দেওয়ার ফলে আদিবাসী নারীদের প্রচলিত অর্থনৈতিক কর্তৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়ে।" [] নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতা কমানোর জন্য উপনিবেশকারীরা বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা আরোপ করে। এর একটি প্রধান উদাহরণ হলো কানাডার ভারতীয় আইন, যা নারীদের অবস্থানকে পুরুষদের তুলনায় নিম্নতর হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছিল। এই আইনের ফলে আদিবাসী পরিচয় ও মর্যাদা নির্ধারণের ক্ষেত্রে কেবল পুরুষের বংশধারাকে বিবেচনা করা হতে থাকে। এর ফলে নারীরা তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার একটি বড় অংশ হারায়।[১০] আদিবাসী সমাজে নারীদের রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষমতা একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। অনেক আদিবাসী সমাজে নারীদের আধ্যাত্মিক বা তাত্ত্বিক ভূমিকা তাদের বাস্তব রাজনৈতিক ভূমিকার ভিত্তি তৈরি করত। কিন্তু উপনিবেশবাদী শাসকরা তাদের চাপিয়ে দেওয়া ধর্মীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে নারীদের এবং দ্বি-চেতা (যারা ঐতিহ্যগতভাবে লিঙ্গভিত্তিক পরিচয়ের বাইরের অবস্থান ধারণ করত) ব্যক্তিদের নেতৃত্ব থেকে বাদ দিয়েছে। এর ফলে আদিবাসী সমাজে লিঙ্গভিত্তিক ক্ষমতার ভারসাম্য মারাত্মকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।" []

আদিবাসী নারী ও চিকিৎসা-শিল্প ব্যবস্থার ভূমিকা

[সম্পাদনা]

ঔপনিবেশিকরা আদিবাসী সমাজের কাঠামো পরিবর্তন করে সেটাকে শ্বেতাঙ্গ ঔপনিবেশিকদের আদর্শের সাথে মানানসই করতে চেয়েছিল। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, যারা প্রচলিত জাতিগত ও সামাজিক নিয়ম ভঙ্গ করত, বিশেষ করে নারীরা, তাদের "অপরাধমূলক মানসিক রোগী" হিসেবে চিহ্নিত করা হতো। এই অজুহাতে আদিবাসী নারীদের মানসিক হাসপাতাল ও কারাগারে প্রাতিষ্ঠানিক বন্দিত্বের আওতায় আনা হয়। এর মাধ্যমে উপনিবেশকারীরা আদিবাসী নারীদের প্রজনন ক্ষমতার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল।[১১] ১৯৯৮ সালে ছুন ও মেনজিস-এর গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারীকে "অপরাধমূলকভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন" ঘোষণা করা হয়েছে এবং কারাগারে বন্দি করা হয়েছে, তাদের একটি বড় অংশ ছিল জাতিগত ও বর্ণগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। বিশেষভাবে, এমন ৩৮ জন নারীর মধ্যে ৭ জন ছিলেন ফার্স্ট নেশনস আদিবাসী নারী। এটি দেখায় যে, মানসিক স্বাস্থ্য ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা উপনিবেশবাদীদের হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল, যার মাধ্যমে তারা আদিবাসী নারীদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল।[১২]

কানাডায় আদিবাসী নারীদের প্রতি এই ধরনের রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৩০ থেকে ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত আলবার্টা ও ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় যৌন বন্ধ্যাকরণ আইন পাস করার জন্য মানসিক অসুস্থতার এই যুক্তিগুলি ব্যবহার করেছিল। [১৩] কার্যকর করা হয়। মানসিক রোগের অজুহাতে আদিবাসী নারীদের জোরপূর্বক বন্ধ্যা করা হয়েছিল। এই আইন অনুযায়ী, যেসব রোগীকে প্রতিষ্ঠান থেকে মুক্তি দিলে ভবিষ্যতে "মানসিক রোগ বা বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধকতার ঝুঁকি থাকবে," তাদের জোর করে বন্ধ্যাকরণ করা হতো।[১৩] গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব আদিবাসী রোগীকে ইউজেনিক্স বোর্ডে উপস্থাপন করা হয়েছিল, তাদের ৭৪% অবশেষে বন্ধ্যাকরণের শিকার হন, যেখানে সাধারণ রোগীদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল ৬০%।[১৩] কারেন স্টোটের গবেষণা "অ্যান অ্যাক্ট অফ জেনোসাইড: কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড দ্য স্টেরিলাইজেশন অফ অ্যাবোরিজিনাল উইমেন (An Act of Genocide: Colonialism and the Sterilization of Aboriginal Women)" অনুসারে, ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৬ সালের মধ্যে ১২০০-এর বেশি নারীর বন্ধ্যাকরণ করা হয়, যার মধ্যে ১১৫০ জনই ছিলেন আদিবাসী নারী। এটি দেখায় যে, এই চিকিৎসা-শিল্প কাঠামো আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উপনিবেশবাদী নীতির অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।[১৪]

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ভারতীয় বিষয়ক অফিস (OIA) "সেভ দ্য বেবিজ" নামে একটি উদ্যোগ চালু করেছিল। এটি প্রগ্রেসিভ যুগের বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ ছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল মা ও শিশুর স্বাস্থ্য উন্নত করা। বিশেষভাবে, আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে উচ্চ শিশুমৃত্যুর হার কমানোর জন্য হাসপাতালেই প্রসব করানোকে উৎসাহিত করা হয়েছিল।[১৫] ওআইএ হাসপাতালের জন্মপ্রক্রিয়া শুধুমাত্র স্বাস্থ্যগত উদ্যোগ ছিল না। এটি আদিবাসী পরিবারের কাঠামো, সন্তান জন্মদানের প্রচলিত রীতি ও পশ্চিমা চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের একটি হাতিয়ার ছিল। আদিবাসী স্বাস্থ্যচর্চাকে নির্মূল করা এবং প্রবীণ ও সম্প্রসারিত পরিবারের ভূমিকা দুর্বল করাই ছিল এই কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য। এটি ছিল একটি বৃহত্তর অভিযোজনমূলক নীতির অংশ, যার মাধ্যমে আদিবাসী সমাজকে মূলধারার পশ্চিমা সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা হতো। গবেষক থিওবাল্ড যুক্তি দেন যে, যদিও এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে অসঙ্গতি ছিল এবং অনেক সময় পর্যাপ্ত তহবিলের অভাব ছিল, তবুও এটি বিংশ শতকের গোড়ার দিকে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভারতীয় নীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ ছিল।[১৫] ওআইএ-এর মূল লক্ষ্য ছিল আদিবাসী নারীদের প্রজনন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাদের বাধ্য করা যাতে তারা হাসপাতালেই সন্তান প্রসব করে। এর মাধ্যমে আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, পারিবারিক কাঠামো ও সংস্কৃতিকে ধাপে ধাপে মূলধারার সঙ্গে একীভূত করার চেষ্টা করা হয়েছিল।

তত্ত্ব ও গবেষণা

[সম্পাদনা]

আদিবাসী নারীবাদ একদিকে ঐতিহ্যবাহী সামাজিক মডেলগুলোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, অন্যদিকে আধুনিক আন্তঃসংযুক্ত নারীবাদী ভাবনাগুলোও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।[১৬] তবে আদিবাসী নারীবাদ ও উত্তর-উপনিবেশবাদী নারীবাদের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। অনেক গবেষক যুক্তি দিয়েছেন যে, উত্তর-উপনিবেশবাদী তত্ত্ব সাধারণত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপনিবেশবাদের ইতিহাসকে উপেক্ষা করে এসেছে।[১৭] কিছু আদিবাসী গবেষক, যেমন রবার্ট ওয়ারিয়র, এলিজাবেথ কুক-লিন, ও ক্রেইগ এস. ওম্যাক, উত্তর-উপনিবেশবাদী তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা ও তার আদিবাসী অধ্যয়নের ক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। পশ্চিমা তাত্ত্বিক কাঠামোর প্রতি অনেক সময় অবিশ্বাস দেখা যায়, কারণ এসব কাঠামো আদিবাসী দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রান্তিক করে তোলে। এলিজাবেথ কুক-লিন তার রচনায় Who Stole Native American Studies? আলোচনা করেছেন যে, "উত্তর-উপনিবেশবাদী" ধারণার সীমানা কী এবং একটি সমাজ কখন "উত্তর-উপনিবেশবাদী" হয়ে ওঠে—এই নামকরণের ক্ষমতা আসলে কার হাতে থাকে, সে বিষয়ে তীব্র বিতর্ক রয়েছে।[১৮] ফলস্বরূপ, এই ধরনের সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য অনেকেই আদিবাসী নারীবাদকে একটি বিকল্প ও কার্যকর উপায় হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

আধুনিক আদিবাসী নারীবাদের বিকাশ আসলে সেই প্রবণতার বিরুদ্ধে একটি প্রতিক্রিয়া, যেখানে পশ্চিমা নারীবাদকে সকল নারীর অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রয়োগ করতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই ধরনের প্রয়াস বাস্তবিকভাবে ব্যর্থ, কারণ এটি নারীদের এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতাকে একরকম করে ফেলে। কিম্বার্লে ক্রেনশ’র "আন্তঃসংযোগ" তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে, আদিবাসী নারীবাদী তত্ত্ব চায় শ্বেতাঙ্গ নারীবাদের সেই প্রবণতাকে উল্টে দিতে, যেখানে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতাকে একত্রিত করে ফেলা বা উপেক্ষা করা হয়। আদিবাসী নারীবাদ এই পার্থক্যগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে এবং আদিবাসী নারীদের বাস্তব অভিজ্ঞতাকে নারীবাদী আলোচনার কেন্দ্রে আনে।[১৯]

চেরিল সুজ্যাক ও শারি এম. হুহনডর্ফ তাদের গ্রন্থ "ইন্ডিজেনাস উইমেন অ্যান্ড ফেমিনিজম: পলিটিক্স, অ্যাক্টিভিজম অ্যান্ড কালচার" -এ ব্যাখ্যা করেছেন যে, আদিবাসী নারীবাদ যদিও তুলনামূলকভাবে নতুন একটি গবেষণাক্ষেত্র, এটি আদিবাসী নারীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও সাংস্কৃতিক চর্চার ফসল। এই আন্দোলনগুলো মূলত লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই, আদিবাসী নারীদের সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ এবং তাদের সামাজিক অদৃশ্যতা ও প্রান্তিকীকরণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য পরিচালিত হয়েছে। যদিও আদিবাসী নারীদের সঙ্গে "নারীবাদ" শব্দটির সম্পর্ক কিছুটা জটিল এবং মূলধারার নারীবাদী আন্দোলনের সঙ্গেও তাদের টানাপোড়েন রয়েছে, তবুও এই সংগ্রামগুলো নারীবাদের অন্তর্ভুক্ত বলেই ধরা যেতে পারে।[] এটি লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে, আদিবাসী নারীবাদের যে জ্বলন্ত ইস্যুগুলো আলোচনার দাবি রাখে, তা নারীবাদ ও আদিবাসী চেতনাবাদের মধ্যকার সীমারেখাকে অতিক্রম করে। অর্থাৎ, আদিবাসী নারীবাদের প্রশ্ন শুধুমাত্র নারীবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে বোঝা সম্ভব নয়, এটি আদিবাসী পরিচয়, সংস্কৃতি ও সমাজের গভীর বাস্তবতার সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত।[২০]

আধুনিক আদিবাসী নারীবাদের বিকাশ মূলত উপনিবেশবাদ থেকে উদ্ভূত সমস্যাগুলোর প্রতিক্রিয়া হিসেবে গড়ে উঠেছে।[] এটি শুধু উপনিবেশ ও তার পরবর্তী নিপীড়নের ফল নয়, বরং সেই নিপীড়নের সরাসরি জবাবও। আদিবাসী নারীরা যখন নিজেদের সাংস্কৃতিক চর্চা ও সামাজিক রীতিনীতিকে ভেতর থেকে প্রশ্ন করে, তখন তারা তাদের নিজস্ব সম্প্রদায়কে নতুনভাবে গড়ে তোলার সুযোগ পান। এটি তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও সাংস্কৃতিক মালিকানাকে সুসংহত করতে সাহায্য করে। শ্বেতাঙ্গ নারীবাদ থেকে আদিবাসী নারীবাদকে আলাদা করে দেখার মাধ্যমে বোঝা যায়, কীভাবে মূলধারার নারীবাদ আদিবাসী নারীদের অভিজ্ঞতাকে পুরোপুরি ধারণ করতে পারে না। আদিবাসী নারীবাদ শুধুমাত্র লিঙ্গভিত্তিক সমতার প্রশ্ন নয়, বরং এটি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সার্বিক মুক্তি, সংস্কৃতির পুনরুদ্ধার ও ঐতিহ্যগত জীবনের সুরক্ষার সঙ্গেও জড়িত।

একইভাবে, আদিবাসী নারীবাদ অন্যান্য আদিবাসী অধিকার আন্দোলন, যেমন আদিবাসী মুক্তি তত্ত্ব তত্ত্ব থেকে কিছু দিক দিয়ে আলাদা। আদিবাসী মুক্তির তত্ত্ব সাধারণত উপনিবেশবাদ ও বর্ণবাদ কীভাবে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপর প্রভাব ফেলে, সে বিষয়ে বিশ্লেষণ করে। তবে, এসব তত্ত্ব অনেক সময় লিঙ্গভিত্তিক নিপীড়নের বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে না। অর্থাৎ, "উপনিবেশিক দমন-পীড়ন ও বর্ণবাদ কীভাবে পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা অভিজ্ঞতা তৈরি করে, কিংবা আদিবাসী সমাজের ভেতরকার নারী বিদ্বেষমূলক চর্চাগুলো কীভাবে টিকে আছে, সে বিষয়ে এগুলো তেমন মনোযোগ দেয়নি।"[২১] আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছু লোক আছেন বিশেষ করে কিছু নারী, নিজেদের নারীবাদী পরিচয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে চান না এবং তারা মূলধারার নারীবাদ থেকে নিজেদের দূরে রাখেন। এর পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তবে, গবেষক কিম অ্যান্ডারসন যুক্তি দেন যে:[২২]

যদি পশ্চিমা নারীবাদ আমাদের জন্য অগ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে এই কারণে যে এটি অধিকারের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়, কিন্তু দায়িত্বের বিষয়ে কম কথা বলে, তাহলে আমাদের নিজেদের সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। যদি আমরা সমতার পরিবর্তে পার্থক্যকে গুরুত্ব দিতে চাই, তাহলে নিশ্চিত করতে হবে যে, এই পার্থক্য এমন একটি কাঠামোর মধ্যে থাকবে, যা সমাজের সব সদস্যকে ক্ষমতায়িত করে। যদি আমাদের মনে হয় নারীবাদ পশ্চিমা উদারনৈতিক মতাদর্শ ও ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর বেশি নির্ভরশীল, তাহলে আমাদের দেখতে হবে যে, আমাদের নিজস্ব সমষ্টিভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি যেন সকল সদস্যের উপকারে আসে। এবং যদি আমরা এমন কিছু নারীত্বের ধারণাকে গ্রহণ করতে চাই, যা পশ্চিমা নারীবাদীদের জন্য বিতর্কিত ... তাহলে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে এই ধারণাগুলো যেন সংকীর্ণ অর্থে বা পুরুষতান্ত্রিক ব্যাখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে প্রকৃত অর্থেই নারীদের জন্য মুক্তির পথ তৈরি করে।

বহু গবেষক ও কর্মী আদিবাসী নারীবাদকে উগ্র নারীবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত মনে করেন। কারণ এটি বিদ্যমান ক্ষমতার কাঠামোগুলোর আমূল পরিবর্তনের পক্ষে কথা বলে। আদিবাসী নারীদের প্রতি যে নিপীড়ন চলে আসছে, তা শুধু পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্যের কারণে নয়, বরং বর্ণভিত্তিক বৈষম্যের কারণেও ঘটে। তাই আদিবাসী নারীবাদ এই দুই ধরনের শোষণের বিরুদ্ধেই সংগ্রাম গড়ে তোলে।[] আদিবাসী নারীবাদ শুধু নারীদের জন্য নয়, বরং পুরুষদেরও আহ্বান জানায়, যেন তারা উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ে অংশ নেয়। কারণ উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের মাধ্যমেই প্রকৃত মুক্তি অর্জন সম্ভব। মিসকিটো জনগোষ্ঠীর মিরনা কানিংহাম বলেন, "আদিবাসী জনগণের সংগ্রাম আমাদের আদিবাসী নারীদের সংগ্রামের জন্য কোনো হুমকি নয়। বরং আমরা এই দুই ধরনের সংগ্রামকে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে দেখি।"[২৩] আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অবদমন বা অধীনতা থেকে মুক্তির সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো উপনিবেশমুক্তি বা ডিকলোনাইজেশন। এটি শুধু রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত স্তরেও প্রয়োজন। উপনিবেশবাদ আদিবাসী নারীদের কণ্ঠস্বর দমিয়ে রেখেছে, তাদের ভূমিকা সীমিত করে দিয়েছে। তাই প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনের জন্য উপনিবেশিক কাঠামোগুলো সম্পূর্ণরূপে উচ্ছেদ করাই আদিবাসী নারীবাদের অন্যতম লক্ষ্য।[]

শ্বেতাঙ্গ নারীবাদের সমালোচনা

[সম্পাদনা]

আদিবাসী নারীবাদীরা মূলধারার পশ্চিমা নারীবাদী তত্ত্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে অনেক সময় অনাগ্রহী থাকেন। কারণ, পশ্চিমা নারীবাদ সাধারণত উপনিবেশবাদের কারণে আদিবাসী নারীরা কীভাবে লিঙ্গভিত্তিক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তা বোঝার চেষ্টা করে না। ইতিহাস বলে, শ্বেতাঙ্গ নারীরা অনেক সময় আদিবাসী নারীদের বহুমুখী নিপীড়নের বিষয়ে সহমর্মী হননি বা তাদের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছাও প্রকাশ করেননি। মূলধারার নারীবাদ প্রায়শই ধরে নেয় যে লিঙ্গ বা যৌন ভিত্তিক নিপীড়নের বিরুদ্ধেই প্রধান (বা একমাত্র) সংগ্রাম হওয়া উচিত। আদিবাসী পরিচয় বা সংস্কৃতির প্রতি বৈষম্যকে তারা গৌণ মনে করে। এই মনোভাব আদিবাসী নারীদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।[] গবেষক মোরটন-রবিনসন উল্লেখ করেছেন যে শ্বেতাঙ্গ "নারীবাদীরা নিজেদের নিপীড়কের ভূমিকায় দেখতে চান না। তারা মনে করেন, নিজেদের নিপীড়িত পরিচয়কে অগ্রাধিকার না দিলে নারীবাদী আন্দোলনের ক্ষতি হবে। এই মনোভাবের ফলে আদিবাসী নারীদের দাবি বারবার উপেক্ষিত হয়।"[২৪] শ্বেতাঙ্গ নারীবাদীরা নিজেদের প্রয়োজনকে আদিবাসী নারীদের প্রয়োজনের ওপরে রাখেন, যার ঐতিহাসিক শিকড় রয়েছে। ফলে আদিবাসী নারীবাদীরা "নারীদের অধিকার" বা "নারীদের মুক্তি" বলার সময় তা একধরনের সাধারণীকরণ বা একমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে যায় কি না, সে বিষয়ে সতর্ক থাকেন।[২৫] কারণ, সকল আদিবাসী নারী এমন একটি অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন, যা কেবল লিঙ্গভিত্তিক নিপীড়ন নয়, বরং উপনিবেশবাদের কারণে সৃষ্ট শোষণের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এই নিপীড়ন শুধু আদিবাসী নারীদের নয়, বরং সকল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অভিন্ন অভিজ্ঞতা।[১৬]

আদিবাসী নারীদের দৃষ্টিভঙ্গি তাদের ভূমির সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক, উচ্ছেদ ও বাস্তুচ্যুতির অভিজ্ঞতা, বর্ণবাদ ও লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হওয়া এবং মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার মধ্যে সক্রিয় ভূমিকা রাখার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি, তারা নিজেদের সমাজ ও অন্যান্য অশ্বেতাঙ্গ সংস্কৃতির মধ্যে লিঙ্গ ও যৌন রাজনীতির জটিলতা নিয়ে প্রতিনিয়ত আলোচনা ও সমঝোতা করতে বাধ্য হন। অন্যদিকে, শ্বেতাঙ্গ মধ্যবিত্ত নারীবাদীরা তুলনামূলকভাবে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত। তাদের এই সুবিধা প্রায়শই উপনিবেশবাদ ও আদিবাসীদের উচ্ছেদের ফলে পাওয়া লাভের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে—যা তারা অনেক সময় স্বীকারই করেন না। আদিবাসী নারীদের দৃষ্টিকোণ থেকে, প্রতিটি শ্বেতাঙ্গ নারীই উপনিবেশবাদ থেকে কোনো না কোনোভাবে উপকৃত হয়েছেন এবং এখনও হচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য উপনিবেশিক দেশগুলোতে শ্বেতাঙ্গ নারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ও ক্ষমতাশালী অবস্থানে থাকেন। তারা নারীত্বের প্রাথমিক মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হন এবং অধিকাংশ নারীবাদী আলোচনার কেন্দ্রে থাকেন। ফলে, আদিবাসী নারীদের চিন্তাভাবনা ও কাজগুলো মূলধারার নারীবাদী তত্ত্ব ও নীতিনির্ধারণে খুব কমই স্থান পায়। ক্যারি বোরাসার মতে, মূলধারার নারীবাদ আদিবাসী নারীদের সমস্যাগুলো যথাযথভাবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়, কারণ এই নারীবাদ নিজেই উপনিবেশিক মানসিকতায় গঠিত। পশ্চিমা নারীবাদ আদিবাসী পরিচয়, বর্ণবাদ, পুরুষতন্ত্র এবং খ্রিস্টধর্মকে ব্যবহার করেছে আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে "অন্য" বা "অনুন্নত" হিসেবে দেখানোর জন্য। এই ধারণাগুলো ব্যবহার করে তারা আদিবাসী সমাজকে সভ্য করার প্রয়োজনীয়তা তৈরি করেছে। এর ফলে, মূলধারার নারীবাদী আলোচনায় আদিবাসী নারীদের সংগ্রাম ও অবদান প্রায়শই উপেক্ষিত থেকে যায়।[১০]

শ্বেতাঙ্গ নারীবাদীরা যখন আদিবাসী নারীদের তাদের আন্দোলনে অন্তর্ভুক্ত করেছেন, তা প্রায়ই প্রতীকী বা লোক দেখানো মাত্র। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, এই অন্তর্ভুক্তি আসলে শ্বেতাঙ্গ নারীদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য হয়েছে, আদিবাসী নারীদের প্রকৃত প্রয়োজন ও সমস্যার জন্য নয়। ফলে, আদিবাসী নারীদের জন্য যৌথভাবে উপকারী কোনো পরিবর্তন আনতে এটি ব্যর্থ হয়েছে।[২৪] আদিবাসী নারীবাদী আন্দোলনগুলো স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছে যে, "আদিবাসী নারীবাদ কেবল একটি তাত্ত্বিক ধারণা নয়; এটি ইতিহাস ও রাজনীতির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত, পাশাপাশি এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিষয়গুলির সাথে একটি ব্যবহারিক সম্পৃক্ততা"। [২৬] মূলধারার নারীবাদের কিছু লক্ষ্য আদিবাসী নারীবাদীদের লক্ষ্যের সঙ্গে মিল থাকতে পারে, তবে অনেক আদিবাসী নারী মনে করেন যে তাদের সংগ্রাম অন্যান্য বর্ণগতভাবে প্রান্তিক নারীদের নারীবাদী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও, তা একেবারে একরকম নয়। আররেন্তে সম্প্রদায়ের সেলেস্ট লিডল স্পষ্টভাবে বলেন, "আমরা, আদিবাসী নারীরা, স্বীকার করি যে আমাদের লড়াই অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীর নারীবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে আমাদের সংগ্রাম এক নয়।" মূলধারার নারীবাদ প্রায়শই লিঙ্গভিত্তিক নিপীড়নের সাধারণ দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করে, কিন্তু শ্রেণি, শিক্ষা এবং এই ধরনের নিপীড়নের প্রভাব আদিবাসী পুরুষদের ওপর কেমন পড়ে—সেই বিষয়গুলো উপেক্ষা করে।[] মিনি গ্রে তার প্রবন্ধ, ফ্রম দ্য টুন্ড্রা টু দ্য বোর্ডরুম টু এভরিহোয়ার ইন বিটুইন -এ এই সমস্যার ওপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, মূলধারার নারীবাদ প্রায়শই কেবল লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের ওপরই গুরুত্ব দেয়, কিন্তু শ্রেণিগত অবস্থান, শিক্ষাগত সুযোগ-সুবিধা এবং আদিবাসী পুরুষদের ওপর নিপীড়নের প্রভাবের মতো বিষয়গুলোকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় না। তিনি আরও বলেন,

"আমরা, ইনুইট নারীরা, সমান কাজের জন্য সমান মজুরি, পরিবারে সমান দায়িত্ব ভাগাভাগি, সরকারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় সমান অংশগ্রহণ, বাণিজ্য ও বিজ্ঞানের সব পর্যায়ে নারীদের সমানভাবে নিয়োগ, শিক্ষার সমান সুযোগ এবং আমাদের সন্তানদের নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বড় করার অধিকার চেয়েছি। এর মানে হলো দারিদ্র্যের সীমার ওপরে অবস্থান নিশ্চিত করা। আমি এসব দাবিকে নারীমুক্তির অংশ হিসেবে দেখি না, বরং এগুলোকে মানুষের মুক্তি হিসেবে দেখি। আমরা আমাদের পুরুষদের প্রয়োজন করি এবং ভালোবাসি। একইভাবে, তাদেরও মুক্ত করা দরকার সেই সামাজিক কাঠামো থেকে, যা তাদের ঐতিহ্যগত ভূমিকার বাইরে আসতে বাধা দেয় এবং বর্তমান ব্যবস্থাকে অপরিবর্তিত রাখে।" []

এটি বোঝায় যে আদিবাসী নারীবাদ শুধুমাত্র নারীদের অধিকারের জন্য লড়াই নয়, বরং এটি আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামগ্রিক মুক্তির জন্য একটি সংগ্রাম।

মূলধারার নারীবাদ প্রায়শই আদিবাসী নারীদের বাস্তবতা এবং সংগ্রামের মূল দিকগুলো উপেক্ষা করে। এর একটি প্রধান উদাহরণ দ্বিতীয় তরঙ্গের নারীবাদীদের সমান মজুরির জন্য লড়াই। সেলেস্ট লিডল এই প্রসঙ্গে বলেন, "সমান মজুরি আমাদের সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে বহু বছর ধরে আদিবাসী মানুষদের শ্রমের বিনিময়ে কোনো পারিশ্রমিকই দেওয়া হয়নি।"[] এই কারণে, যখন দ্বিতীয় তরঙ্গের নারীবাদীরা পুরুষদের সমান মজুরির জন্য আন্দোলন করছিলেন, তখন আদিবাসী নারীদের অধিকারের প্রশ্ন পেছনের সারিতে ঠেলে দেওয়া হয়।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নির্দিষ্ট অধিকারের স্বীকৃতি পেতে আদিবাসী নারীদের অপেক্ষার সময়। উদাহরণস্বরূপ, কানাডায় শ্বেতাঙ্গ নারীরা ১৯১৮ সালে ভোটাধিকার পেলেও, অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর নারীরা এই অধিকার পান অনেক পরে। বিশেষত, কানাডার আদিবাসী নারীরা ১৯৬০-এর দশক পর্যন্ত ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি। তখন পর্যন্ত দ্বিতীয় তরঙ্গের নারীবাদীরা ইতোমধ্যে ভোটাধিকারের লড়াই থেকে সরে এসে অন্য ইস্যুতে মনোযোগ দিয়েছিলেন। ফলে আদিবাসী নারীদের সমস্যাগুলো মূলধারার নারীবাদের আলোচনায় গুরুত্ব পায়নি।[]

সাম্প্রতিক কালে, রাউনা কুওক্কানেন (সামি) যুক্তি দিয়েছেন যে আদিবাসী নারীদের জন্য একটি স্বতন্ত্র আদিবাসী দর্শনের প্রয়োজন, যা নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে বেশি কার্যকর হবে। তার মতে, "নারীবাদী মতবাদ ও আন্দোলন সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে চায় বটে, তবে... তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রায়শই সামষ্টিক স্বার্থ এবং ভূমি অধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে উপেক্ষা করে, যা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।"[২৭]

মূলধারার নারীবাদের বিরুদ্ধে কানিংহাম আরেকটি সমালোচনা উপস্থাপন করেছেন:[২৩]

তাদের মতে, মূলধারার নারীবাদ একটি সুপ্ত কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত, যেখানে কেন্দ্র ও প্রান্তের ধারণা কাজ করে। এই কাঠামোয় শ্বেতাঙ্গ ও মধ্যবিত্ত নারীরা কেন্দ্রস্থলে থাকে, আর আদিবাসী, আফ্রিকান বংশোদ্ভূত এবং দরিদ্র নারীরা প্রান্তে ঠাঁই পায়। প্রান্তের নারীদের বলা হয়, তাদের নারীবাদ সম্পর্কে কেন্দ্রীয় গোষ্ঠীর তৈরি সংজ্ঞা ও ধারণাকেই মেনে নিতে হবে। অর্থাৎ, আদিবাসী নারীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়, যাতে তারা মূলধারার নারীবাদের দেওয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী নারীদের নির্যাতন ও মুক্তির ধারণাকে গ্রহণ করে। কিন্তু সমস্যা হলো, এই ধারণা আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না। আমাদের জীবনের এমন অনেক দিক আছে, যা এই কাঠামোর সঙ্গে খাপ খায় না, ফলে তা হয় উপেক্ষিত হয়, নয়তো গুরুত্বহীন করে ফেলা হয়। এই প্রচলিত কাঠামো নারীদের আন্দোলনকে একরকম একরূপ করে তুলতে চায়। এটি ধরে নেয় যে সব নারীর অভিজ্ঞতা, চাহিদা ও অধিকারের জন্য লড়াই একই ধরনের। কিন্তু এই ভুল ধারণা বিভিন্ন নারীগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক, ভাষাগত ও সামাজিক বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করে এবং তাদের স্বতন্ত্র দাবিকে অবহেলা করে।

আদিবাসী নারীবাদী গবেষকরা তাদের গবেষণাকে উপনিবেশবাদের আরেকটি শিকার হতে দেয়নি। তারা এর শোষণ ও অপব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। "উপনিবেশবাদ, দাসত্ব এবং গণহত্যার দীর্ঘ ইতিহাস বর্তমানকে যেভাবে গঠন করেছে, সেই প্রেক্ষাপটে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তারা বারবার কথা বলেছেন।"[২৮] তাদের মতে, আদিবাসী নারীবাদকে অবশ্যই উপনিবেশবাদ-বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গড়ে তুলতে হবে।

আদিবাসী নারীবাদের সমালোচনা

[সম্পাদনা]

কিছু পশ্চিমা শিক্ষাবিদ এবং জনপ্রিয় সংস্কৃতি লেখকদের মধ্যে আদিবাসী নারীবাদের একটি সমালোচনা হল, আদিবাসী জনগোষ্ঠী "নারীবাদ থেকে নিজেদের দূরে রাখার পথ বেছে নেয়"।[২৯] কিছু আদিবাসী নারীর কাছে নারীবাদকে ততটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না কারণ উপনিবেশ স্থাপনের আগে এই সমাজগুলোর অনেক ক্ষেত্রে নারীদের মর্যাদা তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল। হলের মতে, এর অর্থ হলো "আদিবাসী" হওয়া মানেই প্রকৃত অর্থে "নারীবাদী" হওয়া।[১৬] তবে এই সমালোচনা নিজেই এমন একটি নারীবাদের সংজ্ঞার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে, যা "পশ্চিমা নারীদের জন্য প্রাসঙ্গিক ঔপনিবেশিক ভাষ্য" বা "শ্বেতাঙ্গ নারীবাদ" নামে পরিচিত।[২৯] নারীবাদকে প্রায়ই একটি শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান আন্দোলন হিসেবে সাধারণীকরণ করা হয়। অনেক গবেষক এবং নারীবাদী মতামত দিয়েছেন যে, শ্বেতাঙ্গ নারীবাদ বৈচিত্র্যময় সামাজিক প্রেক্ষাপটের নারীদের উদ্বেগ যথাযথভাবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে।[] অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী নারীবাদী আইলিন মোরটন-রবিনসনের মতে, সমস্ত আদিবাসী নারী এমন একটি সমাজে বসবাসের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন যেখানে তাদের অবহেলিত করা হয়। এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার জন্য আদিবাসী নারীবাদের চর্চা প্রয়োজন।[] যদিও সমস্ত নারীবাদের উদ্দেশ্য হলো এমন আন্তঃসংযুক্ত নিপীড়নের ধরন চিহ্নিত করা, যা সমস্ত নারীর উপর প্রভাব ফেলে, তবে ইতিহাসে বর্ণবাদ এবং আদিবাসী নারীদের চলমান অস্তিত্ব ও বিশেষ সংগ্রাম (যেমন নিখোঁজ এবং হত্যাকাণ্ডের শিকার আদিবাসী নারীদের সংকট) ম্পর্কে অ-আদিবাসী মানুষের অজ্ঞতা আদিবাসী নারীদের মূলধারার নারীবাদ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। তারা মূলধারার নারীবাদে নিজেদের স্বাগত মনে করে না এবং এটি তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগগুলিকে গুরুত্ব দেয় না।[]

অধিকাংশ লেখাসমূহ, যেগুলোকে "আদিবাসী নারীবাদ" হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তা মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদিবাসী আমেরিকান জনগোষ্ঠীর প্রসঙ্গে লেখা হয়। কিছু ক্ষেত্রে এটি কানাডার প্রথম জাতিগোষ্ঠীর জনগণকে দিকেও ইঙ্গিত করে, তবে তার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। বিশেষ করে, যখন "আদিবাসী নারীবাদী" ব্যক্তিদের কথা বলা হয়, তখন সাধারণত লিয়েন বেটাসামোসাকে সিম্পসন এবং লেসলি মারমন সিলকোর মতো ব্যক্তিদের উল্লেখ করা হয়।

নারীবাদের বেশ কিছু ধারা রয়েছে, যা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে এবং আদিবাসী নারীবাদের তত্ত্ব, বিষয়বস্তু ও গবেষণার সঙ্গে মিল রেখে চলে। তবে, এগুলো সরাসরি "আদিবাসী নারীবাদ" নামে পরিচিত নয়। এই ধারাগুলোর মধ্যে আন্তঃবর্গীয় নারীবাদ, ট্রান্সন্যাশনাল নারীবাদ, উত্তর -উপনিবেশ নারীবাদ, হাওয়াই আদিবাসী নারীবাদ, ভারতে নারীবাদ এবং এশীয় নারীবাদঅন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এই নারীবাদী ধারাগুলো একে অপরের থেকে কিছুটা পৃথক থাকে, কারণ তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং মনোযোগের ক্ষেত্র কিছুটা ভিন্ন। গবেষণা ও সক্রিয়তাবাদের ক্ষেত্রেও এগুলো প্রায়শই পৃথকভাবে বিবেচিত হয়। তবে, অনেকেই মনে করেন যে এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আরও বেশি সংহতি ও পারস্পরিক সহযোগিতা থাকা উচিত, যাতে তাদের তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মপন্থাগুলো একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।[৩০]

সক্রিয়তা

[সম্পাদনা]

প্রভাবশালী ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও সক্রিয়তা বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে পারে। এর মধ্যে রাজনৈতিক বা আইনি প্রতিবাদ, চিকিৎসা ও আরোগ্যের চর্চা, গল্প বলা বা ইতিহাস সংরক্ষণ এবং শিল্পের মাধ্যমে প্রতিবাদ অন্যতম।[৩১]

নিখোঁজ ও হত্যার শিকার আদিবাসী নারী (MMIW)

[সম্পাদনা]

আদিবাসী নারীদের ওপর চলমান গণহত্যা আদিবাসী নারীবাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু মূলধারার নারীবাদে নারীহত্যাকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না, বিশেষ করে যদি ভুক্তভোগীরা আদিবাসী নারী হন। মূলধারার নারীবাদ সাধারণত খুব কমই অগ্রাধিকার পায়, যদি না এটি অ-আদিবাসী নারীদের হত্যা বা নিপীড়নের ঘটনাগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়।[৩২]

আদিবাসী নারীবাদীরা দীর্ঘদিন ধরে ৪ অক্টোবর ও ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে এই নারীদের স্মরণে আলোচনাসভা ও প্রতিবাদী কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য সমাজকে আহ্বান জানিয়ে আসছেন। "সিস্টার্স ইন স্পিরিট" নামে একটি সংগঠন নিখোঁজ ও হত্যার শিকার আদিবাসী নারী ও কিশোরীদের (এমএমআইডব্লিউজি) স্মরণে এসব কর্মসূচির আয়োজন করে। এই আন্দোলনের ফলে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কানাডার সরকার নিখোঁজ ও হত্যার শিকার আদিবাসী নারী ও কিশোরীদের জাতীয় তদন্ত শুরু করে। এই তদন্তে আদিবাসী নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ধরন, এর অন্তর্নিহিত কারণ এবং বৃহৎ সামাজিক কাঠামোর ভূমিকা বিশ্লেষণ করা হয়।[৩৩] তবে, এই তদন্ত পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। সাক্ষ্যের সময়সূচি স্পষ্ট না থাকা, পর্যাপ্ত জনবল ও সম্পদের অভাবের কারণে অনেক সময় তদন্ত প্রক্রিয়া ধীর হয়ে পড়ে বা বাধাগ্রস্ত হয়।[৩৪] তবুও, শেষ পর্যন্ত এই তদন্তে উপসংহার টানা হয় যে, উত্তর আমেরিকায় আদিবাসী নারীদের বিরুদ্ধে একটি চলমান গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে।[৩৫][৩৬][৩৭]

যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল রিসোর্স সেন্টার টু এনহ্যান্স সেফটি অব নেটিভ ওমেন অ্যান্ড দেয়ার চিলড্রেন (এনআইডব্লিউআরসি) প্রতিষ্ঠিত হয়, যার লক্ষ্য হলো "মার্কিন ভারতীয় এবং আলাস্কার আদিবাসী (নেটিভ) উপজাতি, হাওয়াইয়ের আদিবাসী এবং উপজাতীয় ও সংগঠনগুলির পারিবারিক সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।[৩৮] এই প্রতিষ্ঠান আদিবাসী নারীবাদের মূল ভাবনার সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ, কারণ এটি আদিবাসী নারীদের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য কাজ করে।

২০১৯ সালের ১৪ মার্চ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ককমিটির অধীনস্থ "আদিবাসী জনগণের উপকমিটি" একটি তদারকি শুনানি আয়োজন করে। পরবর্তীতে এটি "নিখোঁজ ও হত্যার শিকার আদিবাসী নারীদের অদৃশ্য সংকট উন্মোচন: সহিংসতার চক্র বন্ধ করার সমাধান অনুসন্ধান" শিরোনামে প্রকাশিত হয়। এই শুনানিটি উপকমিটির চেয়ারম্যান রুবেন গ্যালেগো পরিচালনা করেন। তিনি বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ও প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানান, যাতে আদিবাসী নারীদের নিখোঁজ ও হত্যার ক্রমবর্ধমান সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা যায় এবং এর সমাধানের পথ খোঁজা যায়।[৩৯]

আইডল নো মোর

[সম্পাদনা]

আইডল নো মোর হলো একটি আদিবাসী আন্দোলন, যা তিনজন আদিবাসী নারী এবং একজন অ-আদিবাসী মিত্রের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল "অধিকার, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয়তাবাদ সংক্রান্ত সমসাময়িক আলোচনা পরিবর্তন করা। তারা যুক্তি দেন যে আদিবাসী নারীদেরই তাদের জাতির রাজনৈতিক ক্ষমতা ধারণ করা উচিত, অথবা অন্ততপক্ষে, তাদের এই বিষয়ে সমানভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ থাকা উচিত।"[৪০] এই আন্দোলনের প্রধান সক্রিয়তামূলক বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে আদিবাসী সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জাতীয় চেতনার পুনরুত্থান, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং আদিবাসী নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার প্রতিরোধ।[৪১] এই আন্দোলনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো কানাডার "দ্য ইন্ডিয়ান অ্যাক্ট" আইনে পরিবর্তন আনা। এই আইন আদিবাসী জনগণের সার্বভৌমত্বকে সীমাবদ্ধ করে, তাই আইডল নো মোর এর বিরুদ্ধে কাজ করছে। একই সঙ্গে, এই সংগঠন পরিবেশ সংরক্ষণের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে এবং সকল মানুষকে—তারা আদিবাসী হোন বা না হোন—আদিবাসী সার্বভৌমত্বকে সম্মান জানানো এবং প্রকৃতিকে রক্ষা করার আহ্বান জানাচ্ছে। কানাডার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন, নেটিভ ওমেন’স অ্যাসোসিয়েশন অব কানাডা (এনডব্লিউএসি), আদিবাসী নারীবাদের আদর্শকে সমর্থন ও প্রচার করে। এই সংগঠন আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে আদিবাসী নারীদের ক্ষমতায়ন এবং আদিবাসী জনগণের জন্য নীতি ও আইন উন্নয়নে কাজ করে।[৪২]

আদিবাসী দিবস

[সম্পাদনা]

যুক্তরাষ্ট্রে "ক্রিস্টোফার কলম্বাস দিবস" পরিবর্তন করে "আদিবাসী দিবস" করার প্রচেষ্টা আদিবাসী পরিচয় ও ইতিহাসের বর্ণনাকে পরিবর্তনের একটি উদাহরণ।[৪৩] এই পরিবর্তনের সমর্থকরা মনে করেন যে কলম্বাসকে ইতিহাসে অন্ধভাবে গৌরবান্বিত করা হয়েছে, যদিও "তার কর্মকাণ্ডের অনেক নেতিবাচক দিক রয়েছে। তিনি ঔদ্ধত্যপূর্ণ ছিলেন, তার উপনিবেশ পরিচালনার দক্ষতা ছিল না, এবং তিনি আদিবাসী জনগণকে দাসত্বে বাধ্য করার ক্ষেত্রে অনুশোচনাহীন ছিলেন, যদিও তার রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকদের অনেকেই এতে আপত্তি করেছিলেন।"[৪৪] এই দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আদিবাসী জনগণের সম্মানে পালিত অন্যান্য দিবসের সঙ্গে যুক্ত। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আদিবাসী আমেরিকান ঐতিহ্য মাস, আর্জেন্টিনায় দিয়া দেল রেসপেটো আ লা ডাইভারসিডাড কালচারাল (সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধার দিন), স্পেনে দিয়া দে লা হিস্পানিডাড (হিস্পানিসিটি দিবস), ভেনেজুয়েলায় দিয়া দে লা রেজিস্টেন্সিয়া ইন্ডিজেনা (আদিবাসী প্রতিরোধ দিবস) এবং বিশ্বের আদিবাসীদের আন্তর্জাতিক দিবস

আন্তঃপ্রজন্মিক ট্রমা ও আদিবাসী নিরাময় চর্চা

[সম্পাদনা]

ঔপনিবেশিক শাসন থেকে সৃষ্ট সহিংসতার কারণে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চলে আসা মানসিক ও সামাজিক ক্ষত আন্তঃপ্রজন্মগত আদিবাসী জনগণের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই, প্রতিরোধের অংশ হিসেবে নিরাময় বা আরোগ্যের চর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।[৪৫] এই নিরাময় চর্চার মধ্যে রয়েছে ঔপনিবেশ-পূর্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে ফিরে যাওয়া, যেমন—তাঁত বোনা, সেলাই করা, সংগীতচর্চা, অথবা আদিবাসী সম্প্রদায়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা।[৪৬] এছাড়াও, গল্প বলা ও লেখার মাধ্যমে নিজস্ব সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার করাও আদিবাসী সক্রিয়তার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।[৪৭] লেখালেখি নিরাময় এবং সক্রিয়তার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ কার্যকর হাতিয়ার। এটি "নিপীড়ন থেকে বেঁচে থাকার উপায় এবং নিরাময় প্রক্রিয়ায় জড়িত হওয়ার উপায়" উভয়ই হিসেবে কাজ করে। [] র‍্যাডিক্যাল উইমেন অফ কালার-এর "দিস ব্রিজ কলড মাই ব্যাক, রাইটিং" ইটি এই ধারণার বাস্তবায়ন করে। এতে আদিবাসী ও রঙিন নারীদের নারীবাদী লেখা সংকলিত হয়েছে, যা একদিকে তাদের অভিজ্ঞতাকে সৃজনশীলভাবে প্রকাশ করে এবং অন্যদিকে একাডেমিক আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে উপস্থাপন করে।[৪৮]

আদিবাসী নারীদের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

[সম্পাদনা]

জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের প্রতিটি ক্ষেত্রকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে, এবং আদিবাসী নারীরাও এর ব্যতিক্রম নয়। উপনিবেশবাদ আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য পরিবেশগত ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। নতুন রোগের সংক্রমণ, নতুন কৃষি ব্যবস্থা, এবং নতুন জীবনযাপনের পদ্ধতি এই সম্প্রদায়গুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।আদিবাসী জনগোষ্ঠী হাজার বছর ধরে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীলভাবে এবং টেকসই উপায়ে জীবনযাপন করেছে। তবে শিল্পায়নের ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছে, তা এই জনগোষ্ঠীর অভিযোজন ক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে, আদিবাসী নারীদের জন্য এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে খাপ খাওয়ানো ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠেছে। আমেরিকার আদিবাসী নারীদের ক্ষেত্রে, সমুদ্রের এবং ক্যারিবিয়ান সাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি কৃষি ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কৃষি ব্যবস্থা ব্যাহত হলে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে এবং পাশাপাশি, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জ্ঞান হস্তান্তরের ধারাবাহিকতা নষ্ট হতে পারে। যদি টিকে থাকার জন্য কৃষি সম্পর্কিত জ্ঞান আর প্রয়োজনীয় না হয়, তাহলে সেই মূল্যবান ঐতিহ্যগত জ্ঞান হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

অঞ্চল ও জাতি অনুসারে বৈচিত্র্য

[সম্পাদনা]

অস্ট্রেলিয়া

[সম্পাদনা]

অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে আদিবাসী নারীবাদীরা শুধুমাত্র নারীদের মুক্তির জন্য আন্দোলন করেননি। বরং তারা আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ানদের সামগ্রিক মুক্তির জন্য লড়াই করেছেন। তাদের আন্দোলনের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন, গণমাধ্যম ও বিচার ব্যবস্থায় কাঠামোগত বর্ণবাদের বিরুদ্ধে পরিবর্তন আনা, এবং শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। বিশেষ করে, স্কুল ও সম্প্রদায়ের মধ্যে আদিবাসী ভাষাগুলোর পুনর্জাগরণের লক্ষ্যে দ্বিভাষিক শিক্ষাব্যবস্থা চালুর জন্য তারা আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। আদিবাসী নারীবাদীরা শুধু নারীদের অধিকারের জন্য নয়, বরং সমগ্র আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের জন্য কাজ করে আসছেন।[৪৯]

আদিবাসী সম্প্রদায়ের চূড়ান্ত মুক্তির সংগ্রাম, যা প্রধানত নারীদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়, পুনরায় ক্ষমতায়নের প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। এই পুনরুজ্জীবন আন্দোলনের প্রথম ধাপ হলো উপনিবেশবাদকে ক্ষমতাহীনতার মূল কারণ হিসেবে স্বীকার করা এবং এরপর আদিবাসী নারীদের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক চর্চাকে পুনরুদ্ধার ও শক্তিশালী করা, যা নিরাময় প্রক্রিয়ার অংশ। মনে করা হয় যে উপনিবেশবাদের কারণে সৃষ্ট ক্ষত নিরাময়ের একটি প্রধান উপায় হলো নারীদের নিজেদের গল্প বলার সুযোগ দেওয়া। এই গল্পগুলো অনেক সময় বিকৃত বা সম্পূর্ণ মুছে ফেলা হয়েছে, উপনিবেশবাদীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য। [৫০] বর্তমানে, অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দিবস "অস্ট্রেলিয়া দিবস" এর তারিখ বা নাম পরিবর্তন নিয়ে দেশব্যাপী বিতর্ক ও প্রতিবাদ চলছে। এই দিনটি ২৬ জানুয়ারি পালিত হয়, যা অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে প্রথম ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনের স্মরণে নির্ধারিত হয়েছে। তবে, আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ানদের কাছে এই দিনটি "আক্রমণ দিবস" নামে পরিচিত। কারণ, এই দিনটি তাদের জন্য দখলদারিত্ব, সহিংসতা এবং স্থানচ্যুতির প্রতীক। অনেকেই এই তারিখ পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন, কারণ এটি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য একটি বেদনাদায়ক ও ট্রমার দিন। পাশাপাশি, অনেকে নাম পরিবর্তন করে "সার্ভাইভাল ডে" করার প্রস্তাব দিয়েছেন, যাতে আদিবাসীদের ওপর সংঘটিত অবিচার ও বাস্তুচ্যুতির ইতিহাসকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই আহ্বানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে মেলবোর্নের ইয়ারা কাউন্সিল ২৬ জানুয়ারি নাগরিকত্ব প্রদান অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে।[৫১]

মেক্সিকো

[সম্পাদনা]

মূলধারার নারীবাদকে প্রায়শই শ্বেতাঙ্গ, সরল, মধ্যবিত্ত নারীদের কেন্দ্র করে একটি আন্দোলন হিসেবে দেখেন কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা। [৫২] বে, নারীবাদ কখনোই কেবল গ্লোবাল নর্থ বা পশ্চিমা দেশগুলোর একচেটিয়া আন্দোলন ছিল না; এটি বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত হয়েছে এবং জাতিগত, বর্ণগত ও ভৌগোলিক সীমানা অতিক্রম করেছে। মেক্সিকোতে, মেক্সিকান নারীবাদীরা জোর দিয়ে বলেন যে তাদের রাজনৈতিক আদর্শ বিভিন্ন জাতিগত ও সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্যপূর্ণ, তাই "নারীবাদ" কী এবং কী নয়, সে সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা গুরুত্বপূর্ণ।[৫৩] আদিবাসী নারীবাদ একটি সমষ্টিভিত্তিক নারীবাদ, যা পশ্চিমা মূলধারার নারীবাদের মতো ব্যক্তি-ভিত্তিক বা উদারনৈতিক আদর্শ দ্বারা পরিচালিত নয়।[৫৪] মেক্সিকোতে সাতজনের মধ্যে প্রায় দশজন আদিবাসী নারী দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করেন, এবং তিনজন চরম দারিদ্র্যের শিকার। তারা কেবল লিঙ্গবৈষম্যের কারণে নয়, বরং তাদের সামাজিক শ্রেণি ও জাতিগত পরিচয়ের কারণেও বৈষম্যের শিকার হন।[৫৫]

মেক্সিকোতে, মূলধারার উদারনৈতিক নারীবাদ আদিবাসী নারীদের বাস্তব অভিজ্ঞতাকে যথাযথভাবে তুলে ধরে না বলে, তাদের জন্য ভিন্নধর্মী একটি আন্দোলন গড়ে তুলতে হয়েছে। আদিবাসী নারীবাদীরা একসাথে দুটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ায়, তারা প্রায়ই অ-আদিবাসী নারীবাদীদের দ্বারা উপেক্ষিত হন।[৫৬] আধিপত্যবাদী নারীবাদ এবং নারীবাদের প্রচলিত সংজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে কারণ এই ধারণাগুলো প্রায়ই সমস্ত নারীদের অভিন্নভাবে বিবেচনা করে, অথচ বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লিঙ্গের ধারণা ভিন্নভাবে গঠিত হয়েছে। আদিবাসী নারীদের নিজস্ব মর্যাদাবোধ রয়েছে, যা পশ্চিমা নারীবাদ যথাযথভাবে স্বীকৃতি দেয় না।[৫৭] মেক্সিকোর নারীবাদ সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু সার্বজনীন দাবির ওপর কেন্দ্রীভূত, যেমন—নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য দূর করা এবং গার্হস্থ্য সহিংসতা বন্ধ করা। তবে, এটি প্রায়ই ঔপনিবেশিকতা, বর্ণবাদ এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যকে যথাযথভাবে সমালোচনা করে না, যা আদিবাসী নারীদের প্রতি চলমান বৈষম্যের মূল কারণগুলোর মধ্যে একটি।[৫৮]

অত্যাচার, বৈষম্য ও অবহেলার বিরুদ্ধে আদিবাসী নারীরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। তারা অস্ত্র ধারণ করেছেন, আওয়াজ তুলেছেন এবং জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তারা সংস্কৃতি, সম্প্রদায়, অধিকার ও ঐতিহ্যের সংজ্ঞা পুনঃনির্ধারণ করছেন।[৫৯] লুগোর মতে, এটি আদিবাসী নারীবাদের প্রথম ধাপ। আদিবাসী নারীবাদ কেবল লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে নয়, বরং জাতিগত পরিচয়ের বিশ্লেষণের মাধ্যমেও আদিবাসী জনগণের বাস্তবতা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানায়।[৬০] মেক্সিকোতে আদিবাসী নারীবাদের জন্মের সাথে সাথে, আদিবাসীদের বাস্তবতা পুনর্বিবেচনা করার প্রস্তাব করা হয়েছে, কেবল তাদের লিঙ্গ পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে নয়, বরং তাদের জাতিগত পরিচয় বিশ্লেষণের পরিপূরক। [৬১] তারা মেক্সিকোর সমাজ ও রাষ্ট্রকে পরিবর্তন করতে চায় এবং এমন এক জাতীয়তাবাদের সমালোচনা করে, যা পিতৃতন্ত্র, লেসবোফোবিয়া ও হোমোফোবিয়াকে উৎসাহিত করে—যা আদিবাসী নারীদের বিরুদ্ধে জাতিগত সহিংসতার কারণ হতে পারে। এ কারণে আদিবাসী নারীরা কেবল লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধেই নয়, বরং বর্ণবাদ ও সাংস্কৃতিক নিপীড়নের বিরুদ্ধেও লড়াই করছেন।[৬২]

জাপাতিস্তা এবং নারী বিপ্লবী আইন

[সম্পাদনা]

প্রধানত চিয়াপাসের আদিবাসী গোষ্ঠীগুলো—"টসেল্টাল, টসোটসিল, চোল, টিওবাল, জোকে, কানহোবাল এবং মামে"—নিয়ে গঠিত "জাপাতিস্তা" আন্দোলন মেক্সিকোর আদিবাসী জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছে।[৬৩] জাপাতিস্তা বাহিনীতে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং তারা "লিঙ্গগত অধীনতা ছাড়াই রাজনীতি" এবং আদিবাসী অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেন।[৬৪] অলিভেরা উল্লেখ করেন যে, "যেসব আদিবাসী কৃষক নারী যোদ্ধা হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন বা – সুবকমান্ডান্তে মার্কোসের ভাষায় – 'সমর্থন নেটওয়ার্ক' (bases de apoyo) হিসেবে কাজ করেছেন, তারা ইজেটএলএন (জাপাতিস্তা ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি)-এর এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।"[৬৫] জাপাতিস্তা আন্দোলনের লক্ষ্য হলো জাতিগত এবং লিঙ্গগত বৈষম্য দূর করা, এমন একটি পুরুষতান্ত্রিক ও মেস্তিজো-প্রভাবিত সামাজিক পরিসরে প্রবেশ করা, যেখানে এতদিন তাদের কণ্ঠ রুদ্ধ রাখা হয়েছে। এই আন্দোলনের ফলে মেক্সিকোর সংবিধানে আদিবাসী জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার স্বীকৃত হয়েছে।[৬৬] একই সাথে, জাপাতিস্তারা নারী বিপ্লবী আইনের মাধ্যমে নারীর অধিকারের পক্ষে সওয়াল করেছিল। [৬৭] এই আইন নারীবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি অন্যান্য ইজেটএলএন আইনের সমপর্যায়ে স্থান পেয়েছে।[৬৮] নারী বিপ্লবী আইন এবং "জাপাতিস্তা" নারীদের প্রচেষ্টার ফলে বিভিন্ন অঞ্চলের আদিবাসী নারীদের জন্য "স্বতন্ত্র সংগঠনের সুযোগ" তৈরি হয়েছে, যা "১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম ও ভাষ্যের ধরনকে পরিবর্তন করেছে।"[৬৮]

আদিবাসী আমেরিকান নারীবাদ

[সম্পাদনা]

আদিবাসী আমেরিকান নারীবাদ বা আদিবাসী নারীবাদ হল একটি আন্তঃসম্পর্কিত নারীবাদী আন্দোলন যা আদি আমেরিকান এবং প্রথম জাতি ( এফএনআইএম ) নারীদের বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। বৃহত্তর আদিবাসী নারীবাদের একটি শাখা হিসেবে, এটি উপনিবেশবাদবিরোধিতা, আদিবাসী সার্বভৌমত্ব এবং আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশুদের ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার দেয়—তবে এটি শ্বেতাঙ্গ, মূলধারার নারীবাদী মূল্যবোধের পরিবর্তে আদিবাসী আমেরিকান এবং প্রথম জাতিগত সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং অগ্রাধিকারের প্রেক্ষাপটে কাজ করে।[৬৯] আদিবাসী নারীবাদীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো নিখোঁজ এবং খুন হওয়া আদিবাসী নারীদের (এমএমআইডব্লিউ) সংকট"। [৭০]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Liddle, Celeste (২৫ জুন ২০১৪)। "Intersectionality and Indigenous Feminism: An Aboriginal Woman's Perspective - The Postcolonialist"The Postcolonialist 
  2. Smith, Andrea (২০১১)। "Decolonizing Anti-Rape Law and Strategizing Accountability in Native American Communities": 36–43। জেস্টোর 41478932 
  3. Green, Joyce (২০০৭)। Making Space For Indigenous Feminism। Hignell Book Printing, Canada। আইএসবিএন 978-1-842779-40-8 
  4. Moreton-Robinson, Aileen (২০০২)। Talkin' Up To The White Woman: Indigenous Women and Feminism। University of Queensland Press। আইএসবিএন 978-0-7022-3134-6 
  5. Arvin, Maile; Tuck, Eve (২০১৩)। "Decolonizing Feminism: Challenging Connections between Settler Colonialism and Heteropatriarchy": 8–34। ডিওআই:10.1353/ff.2013.0006 
  6. Suzack, Cheryl (২ অক্টোবর ২০১৫)। "Indigenous Feminisms in Canada": 261–274। ডিওআই:10.1080/08038740.2015.1104595 
  7. LaDuke, Winona (২০০৫)। Recovering the Sacred: The Power of Naming and Claimingবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন। South End Press। পৃষ্ঠা 11আইএসবিএন 978-0896087125 – Google Scholar-এর মাধ্যমে। 
  8. Suzack, Cheryl; Huhndorf, Shari M. (২০১০)। Indigenous Women and Feminism: Politics, Activism, Culture। UBC Press। আইএসবিএন 978-0-7748-1809-4 
  9. Anderson, Kim (২০০১)। A Recognition of Being: Reconstructing Native Womanhood। Sumach Press। পৃষ্ঠা 58। আইএসবিএন 978-1-894549-12-7 
  10. Bourassa, Carrie A. (২০১৭)। "Indigenous Women, Reproductive Justice, and Indigenous Feminisms"। Listening to the Beat of Our Drum: Indigenous Parenting in a Contemporary Society। Demeter Press। পৃষ্ঠা 13–45। জেস্টোর j.ctt1rrd9q9 
  11. Menzies, Robert; Palys, Ted (২০০৬)। Mental health and Canadian societyMcGill-Queen's university press। পৃষ্ঠা 149–175। 
  12. Menzies, Robert (১৯৯৮-১১-০১)। "Out of mind, out of law: The regulation of 'criminally insane' women inside British Columbia's public mental health hospitals, 1888-1973"। 
  13. Leason, Jennifer (জুলাই ২০২১)। "Forced and coerced sterilization of Indigenous women: Strengths to build upon" (ইংরেজি ভাষায়): 525–527। আইএসএসএন 0008-350Xডিওআই:10.46747/cfp.6707525পিএমআইডি 34261716পিএমসি 8279667অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  14. Stote, Karen (২০১৫)। An act of genocide : colonialism and the sterilization of Aboriginal womenআইএসবিএন 978-1-55266-732-3ওসিএলসি 901996864 
  15. Theobald, Brianna (২০১৯-১০-২১)। Reproduction on the Reservation। University of North Carolina Press। আইএসবিএন 978-1-4696-5316-7ডিওআই:10.5149/northcarolina/9781469653167.001.0001 
  16. Hall, Lisa Kahaleole (২০০৯)। "Navigating Our Own 'Sea of Islands': Remapping a Theoretical Space for Hawaiian Women and Indigenous Feminism": 15–38। ডিওআই:10.1353/wic.0.0038 
  17. Byrd, Jodi (২০১১)। The Transit of Empire: Indigenous Critiques of Colonialism। University of Minnesota Press। পৃষ্ঠা xxxii। আইএসবিএন 978-1-4529-3317-7 
  18. Cook-Lynn, Elizabeth (১৯৯৭)। "Who Stole Native American Studies?": 9–28। জেস্টোর 1409161ডিওআই:10.2307/1409161 
  19. Crenshaw, Kimberle (১৯৯১)। "Mapping the Margins: Intersectionality, Identity Politics, and Violence against Women of Color": 1241–1299। জেস্টোর 1229039ডিওআই:10.2307/1229039 
  20. Trask, Haunani-Kay (১৯৯৬)। "Feminism and Indigenous Hawaiian Nationalism": 906–916। ডিওআই:10.1086/495125 
  21. Green, Joyce A. (২০০৭)। Making Space for Indigenous Feminism। Fernwood Publishing। পৃষ্ঠা 23। আইএসবিএন 978-1-55266-220-5 
  22. Anderson, Kim (২০১০)। Affirmations of an Indigenous Feminist। UBC Press। পৃষ্ঠা 88। 
  23. Cunningham, Myrna (২০০৬)। "Indigenous Women's Visions of an Inclusive Feminism": 55–59। ডিওআই:10.1057/palgrave.development.1100227 
  24. Moreton-Robinson, Aileen (২০০২)। Talkin' Up To The White Woman: Indigenous Women and Feminism। University of Queensland Press। পৃষ্ঠা 94। আইএসবিএন 978-0-7022-3134-6 
  25. Leigh, Darcy (এপ্রিল ২০০৯)। "Colonialism, Gender and the Family in North America: For a Gendered Analysis of Indigenous Struggles": 70–88। ডিওআই:10.1111/j.1754-9469.2009.01029.x 
  26. Burton, Antoinette। Gender, Sexuality, and Colonial Modernity। Routledge, New York। 
  27. Kuokkanen, Rauna (২০০০)। "Towards an 'Indigenous Paradigm' from a Sami Perspective.": 415। 
  28. mazecyrus (২০১৫-০৭-০৭)। "Open Letter From Indigenous Women Scholars Regarding Discussions of Andrea Smith"Indian Country Today Media Network.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১০-১০ 
  29. Shiels, Shauna। "Review: Making Space for Indigenous Feminism" (ইংরেজি ভাষায়): 113–114। ডিওআই:10.1177/03063968100520011102 
  30. Sinevaara-Niskanen, Heidi (২০১০)। "Crossings of Indigenousness, Feminism, and Gender": 217–221। ডিওআই:10.1080/08038740.2010.498328 
  31. Mouchref, Melissa (জুলাই ২০১৬)। "Representations of Indigenous Feminism and Social Change": 88–101 – EBSCOhost-এর মাধ্যমে। 
  32. Bourassa, Carrie A. (২০১৭)। "Indigenous Women, Reproductive Justice, and Indigenous Feminisms"। Listening to the Beat of Our Drum: Indigenous Parenting in a Contemporary Society। Demeter Press। পৃষ্ঠা 13–45। জেস্টোর j.ctt1rrd9q9 
  33. "National Inquiry into Missing and Murdered Indigenous Women and Girls"National Inquiry into Missing and Murdered Indigenous Women and Girls। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-১০ 
  34. Mochama, Vicky (জুলাই ৬, ২০১৭)। "Feminists Should Focus on Justice for Missing and Murdered Indigenous Women"Toronto Star 
  35. Barrera, Jorge (মে ৩১, ২০১৯)। "National inquiry calls murders and disappearances of Indigenous women a 'Canadian genocide'"CBC News। সংগ্রহের তারিখ জুন ৫, ২০১৯ 
  36. Dalton, Jane (১ জুন ২০১৯)। "Murdered and missing women and girls in Canada tragedy is genocide rooted in colonialism, official inquiry finds"The Independent। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০১৯State ‘actions and inactions and ideology’ blamed for allowing attackers to get away with violence over nearly 50 years 
  37. Ian Austen; Dan Bilefsky (৩ জুন ২০১৯)। "Canadian Inquiry Calls Killings of Indigenous Women Genocide"The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১৯ 
  38. "National Indigenous Women's Resource Center"www.niwrc.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-১০ 
  39. "Unmasking the Hidden Crisis of Murdered and Missing Indigenous Women (MMIW): Exploring Solutions to End the Cycle of Violence," Oversight Hearing before the Subcommittee on Indigenous Peoples of the United States of the Committee on Natural Resources, One Hundred Sixteenth Congress, pp. 1-2, 2019.
  40. Morris, Amanda। "Twenty-First Debt Collectors: Idle No More Combats a Five-Hundred-Year-Old Debt" 
  41. "Idle No More"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-১০ 
  42. "Home – NWAC"NWAC (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-১০ 
  43. Marilia Brocchetto and Emanuella Grinberg (১০ অক্টোবর ২০১৬)। "On Columbus Day, support grows for the indigenous"CNN। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১০-১০ 
  44. "Why L.A. is right to replace Columbus Day with Indigenous Peoples Day"Los Angeles Times (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-১০-০৯। আইএসএসএন 0458-3035। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-১০ 
  45. "Adverse Childhood Experiences and the Lifelong Consequences of Trauma" (পিডিএফ)। ২০২১-০৮-০৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১০-১০ 
  46. Anderson, Kim (২০০১)। A Recognition of Being: Reconstructing Native Womanhood। Sumach Press। পৃষ্ঠা 58। আইএসবিএন 978-1-894549-12-7 
  47. Huhndorf, Shari M. (২০১৫)। "Indigenous Feminism, Performance, and the Gendered Politics of Memory"। Mapping the Americas। পৃষ্ঠা 105–139। আইএসবিএন 978-0-8014-5880-4ডিওআই:10.7591/9780801458804-007 
  48. Moraga, Cherríe; Anzaldúa, Gloria (২০১৫)। This Bridge Called My Back, Fourth Edition: Writings by Radical Women of Color। SUNY Press। আইএসবিএন 978-1-4384-5438-2 [পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]
  49. Liddle, Celeste (২৫ জুন ২০১৪)। "Intersectionality and Indigenous Feminism: An Aboriginal Woman's Perspective - The Postcolonialist"The Postcolonialist 
  50. Fredericks, Bronwyn (২০১০)। Reempowering Ourselves: Australian Aboriginal Women। The University of Chicago Press, Chicago। [পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]
  51. "Melbourne's Yarra council votes unanimously to move Australia Day citizenship ceremonies"theguardian.com.au। ২০১৭-০৮-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-৩০ 
  52. Berenstain, Nora (২০২০)। "White Feminist Gaslighting": 733–758। ডিওআই:10.1017/hyp.2020.31 
  53. Lugos, Brenda (২০২০)। "¿Cómo se vive el feminismo indígena?"La Silla Rota (স্পেনীয় ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০২-০৫ 
  54. Gómez, Mariana Daniela (২৬ জুন ২০১৭)। "Presentación del debate : Mujeres indígenas y feminismos: encuentros, tensiones y posicionamientos"। ডিওআই:10.4000/corpusarchivos.1816অবাধে প্রবেশযোগ্য  |hdl-সংগ্রহ= এর |hdl= প্রয়োজন (সাহায্য)
  55. García, Ana Karen (১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮)। "7 de cada 10 indígenas en México son pobres"El Economista (স্পেনীয় ভাষায়)। 
  56. FILAC, comunicación (২০২০-০৩-১১)। "Racismo invisibilliza violencia contra las mujeres indígenas"FILAC | Fondo para el Desarrollo de los Pueblos Indígenas de América Latina y El Caribe (স্পেনীয় ভাষায়)। ২০২০-১২-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০২-০৫ 
  57. Aparacio, Rosario (২০১৮)। "507 International Perspectives on Gender and Race/Ethnicity"scholar.googleusercontent.com। পৃষ্ঠা 5। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০২-০৫ 
  58. Olivera, Mercedes; Aguilar, Concepción Suárez (২০১৯-১২-০১)। "Justicia, mujeres indígenas y defensa participativa en Chiapas"। Mercedes Olivera (স্পেনীয় ভাষায়)। CLACSO। পৃষ্ঠা 379–404। আইএসবিএন 978-987-722-549-5জেস্টোর j.ctvt6rm5c.20ডিওআই:10.2307/j.ctvt6rm5c.20 
  59. FILAC, comunicación (২০২০-০৩-১১)। "Racismo invisibilliza violencia contra las mujeres indígenas"FILAC | Fondo para el Desarrollo de los Pueblos Indígenas de América Latina y El Caribe (স্পেনীয় ভাষায়)। ২০২০-১২-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০২-০৫ 
  60. Lugos, Brenda (২০২০)। "¿Cómo se vive el feminismo indígena?"La Silla Rota (স্পেনীয় ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০২-০৫ 
  61. Aparacio, Rosario (২০১৮)। "507 International Perspectives on Gender and Race/Ethnicity"scholar.googleusercontent.com। পৃষ্ঠা 5। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০২-০৫ 
  62. Oslender, Ulrich (৩০ ডিসেম্বর ২০০৩)। "Reseña. Cutting the wire. The Story of the Landless Movement in Brazil": 281–286। ডিওআই:10.25058/20112742.199অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  63. Godelmann, Iker Reyes (৩০ জুলাই ২০১৪)। "The Zapatista Movement: The Fight for Indigenous Rights in Mexico"Australian Institute of International Affairs (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০২-০৫ 
  64. Speed, Shannon; Hernandez Castillo, Aida (২০০৬)। Dissident women : gender and cultural politics in Chiapas (1st সংস্করণ)। University of Texas Press। পৃষ্ঠা 95। আইএসবিএন 978-0-292-79433-7ওসিএলসি 646793587 
  65. Olivera, Mercedes (২০০৫)। "Subordination and rebellion: Indigenous peasant women in Chiapas ten years after the Zapatista uprising": 608–628। ডিওআই:10.1080/03066150500267073 
  66. Godelmann, Iker Reyes (৩০ জুলাই ২০১৪)। "The Zapatista Movement: The Fight for Indigenous Rights in Mexico"Australian Institute of International Affairs (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০২-০৪ 
  67. Marcos, Sylvia (২২ জুলাই ২০১৪)। "The Zapatista Women's Revolutionary Law as it is lived today"openDemocracy (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০২-০৪ 
  68. Hernández Castillo, R. Aída (২০১০)। "The Emergence of Indigenous Feminism in Latin America": 539–545। জেস্টোর 10.1086/648538ডিওআই:10.1086/648538 
  69. Ramirez, Renya (২০০৭)। "Race, Tribal Nation, and Gender: A Native Feminist Approach to Belonging": 22–40। জেস্টোর 40314242ডিওআই:10.2979/MER.2007.7.2.22 
  70. McKenna, Cara (২ ডিসে ২০১৬)। "Indigenous feminists strategize before MMIW inquiry - Advocates in Vancouver to hold last of three public meetings this weekend"Metro Toronto। ১৬ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ অক্টো ২০১৭ 

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]
  • অ্যান্ডারসন, কিম। "একজন আদিবাসী নারীবাদীর স্বীকৃতি।" আদিবাসী নারী ও নারীবাদ: রাজনীতি, সক্রিয়তা, সংস্কৃতি । এড. শেরিল সুজ্যাক। ভ্যাঙ্কুভার: ইউবিসি প্রেস, ২০১০। ৮১।
  • ডিয়ার, সারা (২০১৯)। "(En) ভারতীয় লিঙ্গ আইন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আদিবাসী নারীবাদী আইনি তত্ত্ব"ইয়েল জার্নাল অফ ল অ্যান্ড ফেমিনিজম৩১ (১)। 
  • এপিস্কেনিউ, জো-অ্যান। আমাদের আত্মা ফিরিয়ে আনা: আদিবাসী সাহিত্য, জননীতি এবং নিরাময় । উইনিপেগ: ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানিটোবা প্রেস, ২০০৯। ছাপা।
  • হিল কলিন্স, প্যাট্রিসিয়া। কৃষ্ণাঙ্গ নারীবাদী চিন্তাভাবনা: জ্ঞান, চেতনা এবং ক্ষমতায়নের রাজনীতি । [নতুন সংস্করণ] লন্ডন: রাউটলেজ, ২০০৯।
  • সুজ্যাক, চেরিল, শারি এম. হুনডর্ফ, জিন পেরেল্ট, এবং জিন বারম্যান, সম্পাদক। আদিবাসী নারী ও নারীবাদ: রাজনীতি, সক্রিয়তা, সংস্কৃতি । ভ্যাঙ্কুভার: ইউবিসি প্রেস, ২০১০।
  • মিহেসুয়া, ডেভন এ., এবং অ্যাঞ্জেলা ক্যাভেন্ডার উইলসন, সম্পাদক। একাডেমির আদিবাসীকরণ: বৃত্তির রূপান্তর এবং সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়ন । লিংকন: ইউনিভার্সিটি অফ নেব্রাস্কা প্রেস, ২০০৪।
  • গ্রিন, জয়েস এ. এড. আদিবাসী নারীবাদের জন্য স্থান তৈরি করা ব্ল্যাক পয়েন্ট, এনএস: ফার্নউড পাব। , ২০০৭।
  • মারাকল, লি। আমি নারী : সমাজবিজ্ঞান এবং নারীবাদের উপর একটি স্থানীয় দৃষ্টিভঙ্গি। ভ্যাঙ্কুভার, বিসি: প্রেস গ্যাং, ১৯৯৬।
  • অ্যান্ডারসন, কিম এবং বোনিটা লরেন্স, সম্পাদক। শক্তিশালী নারীর গল্প: আদিবাসী দৃষ্টিভঙ্গি এবং সম্প্রদায়ের বেঁচে থাকা । টরন্টো: সুমাচ প্রেস, ২০০৬।
  • মিহেসুয়া, ডেভন এ. আদিবাসী আমেরিকান নারী: উপনিবেশ বিমুক্তি, ক্ষমতায়ন, সক্রিয়তা । লিংকন: ইউনিভার্সিটি অফ নেব্রাস্কা প্রেস, ২০০৩।
  • মোহান্তি, চন্দ্র তালপাদে। সীমানা ছাড়া নারীবাদ: উপনিবেশবাদের অবসান, সংহতি অনুশীলন । লন্ডন: ডিউক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০০৩।
  • রাজাক, শেরিন। এড. জাতি, স্থান এবং আইন: একটি শ্বেতাঙ্গ বসতি স্থাপনকারী সমাজের মানচিত্র উম্মোচন। টরন্টো: বিটুইন দ্য লাইনস, ২০০২।
  • টোভার-রেস্ট্রেপো, মার্সেলা। "জলবায়ু পরিবর্তন এবং কলম্বিয়ার আদিবাসী নারী।" কেস স্টাডি 5.6, গুগল বই, books.google.com/books?id=7pr8xyafPi0C&lpg=PA145&ots=bT8rCesaUm&dq=environmental+impact+on+indigenous+communities+and+women&lr&pg=PA145#v=onepage&q=environmental%20impact%20on%20indigenous%20communities%20and%20women&f=false. ১৫ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে অ্যাক্সেস করা হয়েছে।
  • গ্রিন, ডোনা, প্রমুখ। "অসমানুপাতিক বোঝা: আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ানদের স্বাস্থ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের বহুমাত্রিক প্রভাব।" অস্ট্রেলিয়ার মেডিকেল জার্নাল, অস্ট্রেলিয়ার মেডিকেল জার্নাল, ৫ জানুয়ারী ২০০৯, www.mja.com.au/system/files/issues/190_01_050109/gre11091_fm.pdf।